ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাতীবান্ধায় অভিযানের ভয়ে বন্ধ ক্লিনিক

হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ৭:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ০৩, ২০২২

হাতীবান্ধায় অভিযানের ভয়ে বন্ধ ক্লিনিক

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবৈধ ভাবে জমি দখল করে অনুমোদনহীন হেলথ এন্ড মেডিকেয়ার নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিক করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ক্লিনিকের মালিক ডাঃ তৈফিক আল আমিনের চাচাতো ভাই রিয়াদ হাসান।

এদিকে সারা দেশের ন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত সকল ক্লিনিকের বৈধতা যাচাইছে অভিযান পরিচালনা করছে উপজেলা প্রসাশন। সেই অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে গত কয়েকদিন ধরে অনুমোদনহীন হেলথ এন্ড মেডিকেয়ার ক্লিনিকটি বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এর আগে এই অবৈধ অনুমোদনহীন ক্লিনিকে সিজারের সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা সিভিল সার্জন।

অনুমোদনহীন হেলথ এন্ড মেডিকেয়ারের বিরুদ্ধে গত বুধবার (০১ জুন) লালমনিরহাট-১ আসনের সাংসদ, লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রিয়াদ হাসান।

জানা গেছে, উপজেলার আমতলা বাজারের পাশে ভুক্তভোগী রিয়াদ হাসানের পৈতৃক জমি রয়েছে। সেই জমি চাচাতো ভাই ডা. তৈফিক আল আমিন অবৈধ ভাবে দখল করে হেল্থ এন্ড মেডিকেয়ার নামের ক্লিনিকটি তৈরি করেন। এমনকি কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ক্লিনিকটি পরিচালনা করছেন তারা। আর তাই নিজের বাবার সম্পত্তি বাঁচাতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন রিয়াদ হাসান।

এ দিকে সারা দেশের ন্যায় বুধবার বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত সকল ক্লিনিকের বৈধতা যাচাইছে অভিযান পরিচালনা করছে উপজেলা প্রসাশন। এ সময় তিস্তা প্যাথলজির লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের হাত বাঁচতে গত কয়েকদিন ধরে অনুমোদনহীন হেলথ এন্ড মেডিকেয়ার ক্লিনিকটি বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

এর আগে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও যথাযত ব্যবস্থা না থাকায় গত ২২ জানুয়ারি ওই ক্লিনিকে সিজারের পর এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করলে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেখান ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অবৈধ অনুমোদনহীন ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে নজরে আসে প্রসাশনের। এ ঘটনায় গত ২৭ জানুয়ারি দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রিয়াদ হাসান বলেন, ওই জমিটি আমার বাবার। ডা. তৈফিক অবৈধ ভাবে দখল করে ওই জমিতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক গড়ে তোলেন চিকিৎসার নামে বানিজ্য করছেন। আর তাই আমি বাবার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এর তদন্ত পূর্বক সঠিক বিচার চাই।

হেল্থ এন্ড মেডিকেয়ারের মালিক ডা. তৈফিক আল আমিন বলেন, এই জমি আমার রেজিস্ট্রিকৃত। তারা যে অভিযোগ তুলেছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এছাড়া সরকারি আদেশের সম্মান রেখে আমাদের ক্লিনিকের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছি। এতদিন কোন সরকারি নির্দেশনা ছিলো না। তাই আমরা ক্লিনিকের কার্যক্রম চালিয়েছি। আমাদের ক্লিনিকের লাইসেন্স প্রাপ্তি এক শেষ পর্যায়ে।

হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাঈম হাসান নয়ন বলেন, হেল্থ এন্ড মেডিকেয়ার ক্লিনিক অনুমোদনহীন। তারা অবৈধভাবে পরিচালনা করছে। ওই ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যুসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, সারা দেশের ন্যায় বুধবার বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার ক্লিনিক গুলোতে অভিযান চালাই। এ সময় তিস্তা প্যাথলজির লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যে সব ক্লিনিক অভিযানের ভয়ে বন্ধ রেখে সটকে পড়েছেন তাদেরকে লিখিত ভাবে নোটিশ করা হবে। এরপরেও তারা যদি আইন অমান্য করে তাহলে বন্ধ থাকা ওই ক্লিনিক গুলোকে সিল গালা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, হেল্থ মেডিকেয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগসহ আরও অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা অভিযানের ভয়ে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হেল্থ এন্ড মেডিকেয়ারের কোন কাগজ পত্র আমাদের এখানে নেই। তারা এখনো অনুমোদন পায়নি। তারা অবৈধভাবে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাচ্ছে। অনুমোদনহীন ক্লিনিক গুলো বন্ধের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

 
Electronic Paper