ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সিরাজগঞ্জে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানে ভীড়

এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ৬:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২২

সিরাজগঞ্জে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানে ভীড়

আধুনিকতার ছোঁয়ায় পারিবারিক ও সমাজ থেকে পিঠা তৈরির আয়োজন অনেকটা কমে যাচ্ছে। শীতের পিঠাপুলি বাঙালির আদি খাদ্য সংস্কৃতির একটি অংশ। তবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একশ্রেণীর মৌসুমী ভ্রাম্যমান নারী-পুরুষ ব্যবসায়ী। বাংলার চিরায়ত লোকজ শীতকালীন খাদ্য পিঠা, আর পায়েসের সঙ্গে মিশে আছে আহবমান বাংলার সংস্কৃতি। 

কয়েকদিনের কুয়াশাছন্ন হিমেল ঠান্ডা বাতাসে জানান দিচ্ছে শীতের আমেজ। আর শীতে কম-বেশি সিরাজগঞ্জ বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে বাহারি পিঠা। তাই এবারের শীতে ভিন্ন ধাঁচে আপনিও বাজার থেকে কিনতে পারেন মজাদার সব পিঠা। শীতের আমেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কদর বেড়েছে নানা রকমের শীতের পিঠা। সন্ধা হলেই ভ্রম্যমান পিঠার দোকানগুলোতে ভিড় জমতে শুরু করেছে পিঠা ভক্তরা।

সোমবার (২৪জানুয়ারী) সন্ধ্যায় সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের এস.এস রোড, খলিফা পট্টি, মজিব সড়ক, কালিবাড়ী, চান্দ আলী মোড়, বাজার স্টেশনে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান। এসব দোকানে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠসহ নানান বাহারী পিঠা বানানো হচ্ছে। প্রতিটি পিঠার দাম ৫-১০ টাকা। তবে মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা বেশীর ভাগই দিনাজপুর, রংপুরসহ আশপাশের জেলার। প্রতি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০জন সিরাজগঞ্জে আসে পিঠা বিক্রির জন্য

সরিষা, ধনেপাতা, শুটকি ভর্তা মাখিয়ে সুস্বাদু চিতই পিঠা খাচ্ছে কিশোর কিশোরীসহ বয়োবৃদ্ধরা। এই পিঠার স্বাদ পেতে রিক্স-চালক, দিনমজুর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী সব শ্রেণি-পেশার মানুষই পিঠার দোকানে ভিড় করছে। অনেকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।

রাস্তার পাশে এবং মোড়ে মোড়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসব ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান দিয়েছেন। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীও দোকানে পিঠা বিক্রি করছেন। সংসারে পাশাপাশি তারা বাড়তি আয় করছেন নারীরা। তবে পিঠা বিক্রেতা বলছেন চালসহ দ্রব্যের মুল্য বৃদ্ধি হলেও পিঠার দাম বাড়েনি।

রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর থেকে আসা পিঠা বিক্রতা আসলাম সরদার, আমির হোসেন, আফজাল হোসেন বলেন, শীতের মৌসুমে আমরা ৩০/৪০ জন পিঠা বিক্রি করতে সিরাজগঞ্জ জেলায় আসি। নানান ধরনের বাহারী পিঠা আমরা তৈরী করি। প্রতিদিন সন্ধায় ভ্রাম্যমান দোকান বসিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১২০০/১৫০০ টাকার পিঠা বিক্রি করেন। এ থেকে খরচ বাদে ৫০০/৬০০ টাকা লাভ হয়। তারা আরও বলেন, পাটালীগুড়, নারিকেল দিয়ে এ সুস্বাদু পিঠা বানিয়ে থাকি। খেতে খুব মজা।

শহরের চক কোবদাপাড়া মহল্লার মৌসুমী পিঠা বিক্রেতা আলামিন হোসেন টমু বলেন, আমি গরমের সময় দিনমজুরির কাজ করি। শীতে পিঠার চাহিদা বেশী থাকায় শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করি। আয় ভালই হয়, পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই আছি।

শহরের রেলওয়ে কলোনীর পিঠা বিক্রেতা শেফালী বেওয়া বলেন, আমি বাসা বাড়ীতে কাজ করি। কিন্তু শীতে কাজ করতে তার খুব কষ্ট হয়। তাই শীত এলেই পিঠা বিক্রি করি।

শহরের মুজিব সড়কের পিঠা কিনতে আসা সুমন মৃধা বলেন, কনকনে শীতের ঠান্ডা বাতাসে গরম গরম পিঠা খেতে খুব মজা। আমি তিনটা খেয়েছি পরিবারের জন্য ১০টা নিয়ে যাচ্ছি।

পিঠা খেতে আসা স্কুল ছাত্র আশিকুর রহামন আশিক বলেন, স্কুল শেষে প্রতিদিন চপ, শিঙ্গাড়া, পুড়ি খেতাম। শীত আসার পর থেকে প্রতিদিন ভাপা পিঠা খাই। শীতে ভাপা পিঠা খেতে খুব মজা।

রিক্সা চাঁন মিয়া বলেন, কয়েকদিনের কনকনে শীতের মধ্যে রিক্সা চালানো ভুবই কষ্টকর, তাই একটি গরম গরম চিতই পিঠা খেয়ে শরীরটা গরম করতে চেষ্টা করছি।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডার্স্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সুর্য জানান, শীতে এই মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা প্রতি বছর জেলা আসে। তাদের পিঠাগুলো অনেক সুস্বাদু। মাঝে মাঝে আমিও পরিবারের জন্য এই পিঠাগুলো নিয়ে থাকি। ভ্রাম্যমান এই দোকান শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

 
Electronic Paper