ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পরিযায়ী পাখিশূন্য রাবি

লাবু হক, রবি
🕐 ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২১

পরিযায়ী পাখিশূন্য রাবি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বছরজুড়ে সেজে থাকে নানা রূপে। শীত আসলে সেই রূপ বেড়ে যায় বহুগুণ। এ সময় পরিযায়ী পাখির আগমন ক্যাম্পাসে যোগ করে নতুনমাত্রা। প্রতিটি শীতের সকালে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে রাবি শিক্ষার্থীদের। প্রতিবছর শীত আসতে না আসতে নভেম্বরের শুরুতেই ক্যাম্পাসে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখি। এবার ব্যতিক্রম। নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর গড়ালেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো পরিযায়ী পাখির দেখা মেলেনি। আপাতত রাবিতে পরিযায়ী পাখি আসার সম্ভাবনাও খুব কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপঁচা পুকুর ভরাট করে ছাত্রীহল নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি এই পুকুরেই ভিড় জমাত। রহমতুন্নেছা হলের সামনের পুকুরেও নেই পরিযায়ী পাখি। গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে এই পুকুরেই প্রথমে পরিযায়ী পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছিল। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরগুলোতেও পরিযায়ী পাখির দেখা মেলেনি। প্রতিবছর এই পুকুরগুলোতেই সুদূর সাইবেরিয়া বা হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল থেকে ঝাঁকবেঁধে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখি।

পাখিদের খুনসুটি আর জলকেলিতে মুখরিত থাকত পুরো ক্যাম্পাস। প্রতিবছর দুই ধরনের পাখি আসত রাবি ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি থাকত ডাঙায় বা ডালে। আরেক ধরনের পাখি থাকত পানিতে। এদের বেশিরভাগ পাখিই ছিল হাঁস জাতীয়। রাবিতে ছোট সরালিই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আসত। বাকিদের মধ্যে থাকত বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।

এ বছর পরিযায়ী পাখি না আসায় দুঃখ প্রকাশ করেন রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন বলেন, এবারের শীতে ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির খুনসুটি আর জলকেলির অভাববোধ করছি। ক্যাম্পাসের যেসব জায়গায় পরিযায়ী পাখি আসে সেসব জায়গায় এবার উন্নয়নকর্ম চলছে। ফলে ক্যাম্পাসের অন্যান্য পশু-পাখির আনাগোনাও কমে গেছে। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা না করে ভবন নির্মাণ করে, সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মায়িশা ফারজানা বলেন, রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রতিটি শীতের সকালে পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙত। হলের পাশের পুকুরেই দেখতাম শত শত পরিযায়ী পাখি। খুনসুটি করছে নিজেদের মধ্যে, দিচ্ছে ডুবসাঁতার। তাদের স্বচ্ছ পানিতে ডানা ঝাপটানি, পালকের ভেতরে মুখ গুঁজে মিষ্টি রোদ পোহানো আমাকে মুগ্ধ করত। এবছর পরিযায়ী পাখিদের ভীষণ মিস করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, নিরাপদ আশ্রয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসত। এবারে খাবার থাকলেও নিরাপদ আশ্রয় নেই। ভবন নির্মাণের জন্য প্রতি মুহূর্তে এখানে শব্দ দূষণ হচ্ছে। লোকজনের অবাধ যাতায়াত চলছে। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে তারা এখানে না এসে হয়তো অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছে।

আগামীতে রাবিতে পরিযায়ী পাখির দেখা মিলবে কিনাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, যেহেতু রাবিতে কয়েকটা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এতে সামনে এসব জায়গায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বাড়বে। ফলে এসব এলাকায় আপাতত অতিথি পাখিরা হয়ত আসবে না।

 
Electronic Paper