ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যমুনার বাঁধে ধস: আতঙ্কে মানুষ

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০১৮

পাবনার বেড়া উপজেলায় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যমুনা নদীর ডান তীরের স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ ১৫০ ফুট ধসে গেছে। প্রতিদিনই ধসে যাওয়া অংশের পরিধি বাড়ছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের কোল ঘেষে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং ব্লক চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের হাটুরিয়া বাজার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙনের হুমমির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেণেছ, বেড়ার মোহনগঞ্জ এলাকায় তিনটি পয়েন্টে বাঁধের দুই থেকে তিন ফুট এবং মালদাহপাড়ায় দুটি পয়েন্টে পাঁচ থেকে ছয় ফুট দেবে গেছে। সিসি ব্লক আলগা হয়ে পড়েছে। বাঁধের নিচে নদীতে ফেলা সাপোর্টিং ব্লক অনেক জায়গা থেকে চুরি হয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ ও মালদাহপাড়ায় প্রতিরক্ষা বাঁধের সঙ্গে লাগানো দুটি ইটভাটার লোড ট্রাক চলাচল করছে। ট্রাকের ঝাঁকুনিতে প্রতিরক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক আলগা হয়ে যাচ্ছে। পেঁচাকোলা পয়েন্টে প্রায় ১৫০ ফুট এলাকার সিসি ব্লক নদীতে ধসে গেছে। এছাড়া মোহনগঞ্জ থেকে কৈটোলা পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধের কোল ঘেষে বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর তলদেশের ২৫-৩০ ফুট গভীর থেকে পাইপের সাহায্যে বালু উত্তোলন করায় চার পাশের এলাকা ধসে যাচ্ছে।
২০০০ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাবনার বেড়ায় গত ৪০ বছরের অব্যাহত নদী ভাঙনে যমুনা ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে সরে এসেছে। এ সময়ে যমুনার ভাঙনে ৭২টি গ্রাম, ১০ হাজার একর ফসলি জমি, ১২টি হাট-বাজার, ৩৫টি স্কুল-মাদ্রাসা, ১৫টি মসজিদ-মন্দির, অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অন্য এলাকায় বাড়ি করেছে, সহায়সম্বল হারিয়ে ১৫ হাজার মানুষ বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। নদী ভাঙনে ভূমিহীন হয়ে পাঁচ হাজার মানুষ শহরে বস্তিবাসী হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে যমুনা নদী স্থায়ী ভাঙন রোধের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের আলোকে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার বেড়ার মোহনগঞ্জ থেকে কৈটোলা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার যমুনা নদীর পশ্চিম তীর ভাঙন রোধ প্রকল্প হাতে নেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় তৎকালীন জোট সরকার আমলে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা-মেঘনা রিভার ইরোশন মিটিগেশন প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীর সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে কৈটোলা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। প্রতিরক্ষ বাঁধ নির্মানের ফলে মোহনগঞ্জ থেকে রাকশা পর্যন্ত যমুনা নদীর ভাঙন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার না করা, সিসি ব্লক চুরিসহ যমুনা নদীর পাড় ঘেষে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৫০ ফুট ধসে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সার্ভে করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আগামী অর্থ বছরে টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সংস্কার করা হবে। তবে এলাকার মানুষের মাধ্যে গণসচেতনা সৃষ্টি, ব্লক-জিও ব্যাগ চুরি ও নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে প্রতিরক্ষা বাঁধের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব নয়।

 
Electronic Paper