রামেকে প্রতিদিনই বাড়ছে সাধারণ রোগীর সংখ্যা
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা নিম্নমুখী। দীর্ঘ সময়ের মহামারী এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। হাসপাতালে কমেছে করোনা রোগী। কমেছে শয্যা সংখ্যাও। তবে করোনা মহামারীর নিম্নমুখী অবস্থানে অন্যান্য সাধারণ রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ সবখানেই সাধারণ রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে।
বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ভিড় দেখা যাচ্ছে। যেখানে অপেক্ষার প্রহর গুনতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। আর স্বল্প জায়গায় বাড়তি রোগীর পদচারণায় নিশ্চিত হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, করোনার মধ্যে সাধারণ রোগীর তেমন চাপ ছিল না। এখন প্রচুর রোগীর সমাগম হচ্ছে। হাসপাতালে গত ১৯ আগস্ট বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছিল ২ হাজার ৭৪৬ জন রোগী। জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল ৩৫৬ জন রোগী। যা গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বহির্বিভাগে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৯৮ জনে। জরুরি বিভাগে ৪৩০ জনে। অপরদিকে, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২২ আগস্ট করোনায় মারা যায় ১২ জন। এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিল ২৪০ জন। হাসপাতালে মোট করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ছিল ৫১৩টি। করোনার সংক্রমণের বৃদ্ধিকালে ৫১৩টি শয্যা ছাড়িয়ে রোগীরা বারান্দাতেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের ২৪০ শয্যার বিপরীতে রোগী ছিল ১২২ জন। এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন মারা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, সে সময় সবার মাঝে একধরনের আতঙ্ক ছিল। যার কারণে একান্ত জরুরি না হলে মানুষ হাসপাতালমুখী হয়নি। কিন্তু তারা এখন হাসপাতালে আসছেন। এ কারণে সে সময় সাধারণ রোগির চাপ কম ছিল। যেটা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়ছে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক রোগীর এমন হয়েছে যে, তার আরও দুই-তিন মাস পর অপারেশন করলে চলবে। আবার বার্ন ইউনিট যেহেতু করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাই জটিল অপারেশনগুলোও করা যাচ্ছে না। কিছু রোগী ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার গরিব রোগীরা অপেক্ষা করছেন। এখন আগের চেয়ে অপারেশনের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এসব কারণেই হয়তো সাধারণ রোগী বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, এটা প্রাকৃতিক একটি বিষয়। এ ছাড়া সে সময় যেহেতু মানুষ আতঙ্কিত ছিল। জরুরি না হলে হাসপাতালে আসেনি। আবার এমনও হতে পারে সে সময় অনেক রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাও কম নিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এটা স্বাভাবিক। করোনার সময় অনেক সাধারণ রোগী যেমন- কারও হয়তো পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে, যেটা কিছুদিন পরে অপারেশন করলেও চলবে। এমন রোগীরা করোনার মধ্যে হাসপাতালে তেমন আসেননি। কিন্তু এখন তারা হাসপাতালে আসতে শুরু করেছেন। এ কারণে হয়তো সাধারণ রোগী বাড়ছে।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটা খুবই ভালো দিক যে করোনার সংক্রমণ কমেছে। যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছিল তাতে মনে হচ্ছিল আর কিছুদিন বাড়লে হাসপাতালে হয়তো রোগী ভর্তি করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, বহির্বিভাগে রোগী বাড়ছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। সাধারণ রোগী বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। যেমন- লকডাউন নেই। আবার জরুরি ছাড়া হয়তো হাসপাতালে রোগীও আসেনি। যারা এখন আসছে। তবে সাধারণ রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে টিকিট কাউন্টারে জনবল বাড়ানো হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের সামনের প্রাচীরটি ভেঙে উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোগীদের বসার জন্য জায়গাও বাড়ানো হয়েছে।