ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিব মন্দিরের বটবৃক্ষ

সাকিব হোসেন, পত্নীতলা, নওগাঁ
🕐 ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৪, ২০২১

শিব মন্দিরের বটবৃক্ষ

নিজের রূপ যৌবন বিলিয়ে কালের ভ্রু-কুটি উপেক্ষা করে লাখো পথিককে শীতল ছায়া দিয়ে আজো দ-ায়মান আছে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার মানিকুড়া গ্রামের বটবৃক্ষ। এই বটবৃক্ষে জড়ানো শিবমন্দিরের রয়েছে অনন্য রহস্য। যার সম্পর্কে বলতে পারেন না এলাকার অনেক বয়োবৃদ্ধও।

রাস্তার পাশে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির বিশাল শাখা-প্রশাখা। শিকড়-বাঁকড়ে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। প্রায় ১শ’ বছরের বটগাছটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজস্ব মহিমায়। যেন পথিকের প্রাণ জুড়ানোর এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিবমন্দিরটি ঘিরে রহস্যেঘেরা নানা কাহিনী বংশপরম্পরায় চলে আসছে।

এই শিবমন্দিরটি প্রায় হাজার বছর ধরে ইতিহাস আঁকড়ে এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা। এই বটবৃক্ষটির চারপাশে প্রতিবছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাঁচটি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যথাক্রমে শিব, বাসরী, কালী, বাসন্তী ও বাসরী পূজা হয়ে থাকে এই মন্দিরে।

এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তিতে এ মন্দিরের চারিপাশে বসে মেলা। প্রতি বছর বিভিন্ন এলাকা হতে পূজা অর্চনা করতে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দেখতে আসেন দূর-দুরান্তের অনেক পর্যটক। গাছ ও মন্দিরের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন ইতিহাস অনুসন্ধানীরা। এসব বিবেচনায় দাবি উঠেছে মন্দিরটিকে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকিয়ে রাখার।

এই মন্দিরটি একটি মূল্যবান প্রতœসম্পদ হিসেবেও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি রয়েছে এলাকার সচেতন মহলের। স্থানীয়রা বলছেন, মন্দিরটির ভিতর দুটি কষ্টিপাথরের প্রতিমা ছিল যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চুরি হয়ে যায়।

এছাড়া সাদৃশ্যপূর্ণ লোহার একটি দরজা ছিল যা সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে মন্দিরটির ভিতরে চারটি লোহার কড়া ও চারটি লোহার শিকল প্রতœতত্ত্বের ইতিহাস বহন করছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক দুর্লভ তথ্য অনুসন্ধানে গবেষকদের জন্য মন্দিরটি মূল্যবান উপাদান হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় মন্দিরসহ গাছটি ঘিরে পূজা-অর্চনা করে আসছে দীর্ঘদিন হতে। গাছে জড়ানো মন্দিরটি ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা স্থায়ীভাবে উপাসনালয় বানিয়েছে। মন্দিরে জড়ানো গাছটির ঝুরি চারদিকে নেমে বেশ কয়েকটি আলাদা গাছের সৃষ্টি হয়েছে। মন্দিরটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় শিক্ষিতমহল। মন্দিরের ভিতরে যে উপাদানগুলো রয়েছে তা নিঃসন্দেহে ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে যা প্রায় ৫/৭ শ বছরের পুরনো বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা।

বর্তমান সময়ে মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণে কমিটি থাকলেও তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। যার ফলে এই মন্দিরটিতে বড় আকারের ফাটল ধরেছে। গাছটির লতা দিয়ে বেষ্টিত না থাকলে অনেক আগেই মন্দিরটি ভেঙে বিলুপ্ত হয়ে যেত বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মন্দিরটি সংস্কার ও মন্দিরের পুরনো জিনিসগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 
Electronic Paper