ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন পারিবারিক হাসপাতাল

রাজশাহী ব্যুরো
🕐 ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১

বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন পারিবারিক হাসপাতাল

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা ডা. আকতারুজ্জামান। উপজেলার খায়েরহাট বামনডাঙ্গা গ্রামে তার বাড়ি। তবু তিনি নিজ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শুধু ডা. আকতারুজ্জামানই নয়, এই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন তার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার কান্তা, মামা উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল হান্নান এবং খালু স্বাস্থ্য সহকারী জালাল উদ্দিন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন ডাক্তার আকতারুজ্জামানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, অসুস্থতায় পড়লে চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষ ছুটে যান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রোগ নির্ণয়ের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় সব ধরনেরই যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব যন্ত্র ব্যবহার হয় না। সেখানে রোগী গেলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ লিখে দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি ক্লিনিকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনের চিত্র এটি। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই অবস্থিত জননী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীদের। এটির মালিক বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মো. আকতারুজ্জামান। ঘুরে ফিরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি এ উপজেলায় আছেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা প্রভাব খাটিয়ে চিকিৎসকদের বাধ্য করেন যেন রোগী এলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাদের জননী ক্লিনিকে পাঠানো হয়। আর আকতারুজ্জামান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা হওয়ায় চিকিৎসকরা এতে বাধ্য হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে আকতারুজ্জামান আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। এর দুবছর পর তাকে নাটোরে বদলি করা হয়। দুমাস তিনি নাটোরে থাকেন। এরপর তদবির করে টিএইচও হিসেবে আবার বাঘা চলে আসেন। এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় দুবছর ধরে। এলাকায় পোস্টিং পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নিজের মালিকানাধীন ক্লিনিক ঘিরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন এই চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানিয়েছেন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সব যন্ত্রপাতিই আছে। তারপরও এখানে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার হয় না। রোগী এলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাদের পাঠানো হয় জননী ক্লিনিকে। চার বছর আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে জমি কিনে এই ক্লিনিকটি তৈরি করেন ডা. আকতারুজ্জামান। তবে সাইনবোর্ডে প্রোপাইটার হিসেবে লিখে রেখেছেন মা পারুল নাহারের নাম।

বাঘা পৌরসভার মেয়র আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ। ভর্তি থাকা রোগীদেরও বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আকতারুজ্জামান বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি থাকলেও লোকবল নেই। তাই বাইরে থেকে টেস্ট করে আনতে বলা হয়। আর লোকবল যেন দেওয়া হয় সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper