ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যমুনার ৩২ পয়েন্টে নাব্য সংকট

আবদুল জব্বার, পাবনা
🕐 ৩:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

যমুনার ৩২ পয়েন্টে নাব্য সংকট

সময়মতো ড্রেজিং না করায় যমুনা নদীর প্রায় ৩২টি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে ডুবোচরে পণ্যবাহী ৫০টি জাহাজ আটকা পড়েছে। এর মধ্যে পাবনার নাকালিয়া এলাকায় এক কোটি ৬১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলবাহী ২৩টি জাহাজ মাঝ নদীতে আটকে আছে। আটকেপড়া জাহাজের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব কার্গো জাহাজগুলো জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, কয়লা, গম নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরে যাচ্ছিল। নাব্যতা সংকটে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ অর্ধেকেরও কম লোড নিয়ে নৌ-বন্দরে আসতে পারছে না। মাঝ নদীতে আটকে পড়া জাহাজ থেকে লাইটারেজ করে পণ্যসামগ্রী বন্দরে আনা হচ্ছে।

সরেজমিনে পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া নৌ বন্দরে ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মোংলা বন্দর থেকে বাঘাবাড়ী উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম. ভি জুয়েল, এম.ভি ফেয়ারী-৫, ওটি আছিয়া বেগম, এম.ভি সুমাইয়া হোসেন, এম.ভি ফয়সাল-৪, এম.ভি ফয়সাল-৬ সহ ৫০টি জাহাজ নাকালিয়াসহ আরিচা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। কার্গো জাহাজগুলো জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, কয়লা, গম নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে যাচ্ছিল।

বাঘাবাড়ী বন্দরের সহকারী পরিচালক এসএম সাজ্জাদুর রহমান জানান, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ¦ালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ¦ালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়।

আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। নাব্যতা সঙ্কটে বন্দরে আমদানি রপ্তানি প্রায় ৭০ ভাগ কমে গেছে। এ নৌ চ্যানেলের নাকালিয়া পয়েন্টে প্রচণ্ড নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। বিআইডাব্লিউটিএ নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

তবে বিআইডাব্লিউটিএ’র একটি সূত্র বাঘাবাড়ী বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে বলেছেন, তারা সঠিক সময়ে তথ্য না দেওয়ায় সময়মতো ড্রেজিং করা সম্ভব হয় না, যখন জাহাজ আটকা পড়ে তখনি আমাদের জানানো হয়।

বিসিআইসি’র বাঘাবাড়ী ট্রানজিট বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে জোগান দেওয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়কপথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের একটি সূত্রে জানা যায়, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আরিচা থেকে নগরবাড়ী পর্যন্ত যমুনা নদীতে ২০ থেকে ২৫টি ডুবোচর ও প্রচণ্ড নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পানির স্তর কমে ৬ থেকে ৭ ফুট দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এই নৌপথের মোহনগঞ্জ, হরিরামপুর, চরসাফুল্লা, নাকালিয়া, পেঁচাকোলায় প্রচণ্ড নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

এম.ভি চিলিং বিজয়ের মাষ্টার হেলাল উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ৩২টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে ৭ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌ চ্যানেল। মোহনগঞ্জ ও নাকালিয়া পয়েন্টে কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ পয়েন্টে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না। ওই পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরও সরু হয়ে যাচ্ছে। এই পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

 
Electronic Paper