ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেশমনগরীর পথে মহাদেবপুর

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ)
🕐 ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২১

রেশমনগরীর পথে মহাদেবপুর

নওগাঁয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রেশম চাষ। এরই মধ্যে অনেকে রেশম চাষ করে স্থাপন করেছেন সফলতার দৃষ্টান্ত। পুরুষের পাশাপাশি ঝুঁকছেন নারীরাও। জেলার মেঠোপথের দুপাশ দিয়েও লাগানো হয়েছে তুঁতের গাছ। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে দাবি কৃষকদের। অন্যদিকে রয়েছে বাজার-চাহিদা। দিন দিন রেশমি কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

খদ্দরের কাপড়ের পাঞ্জাবির সুখ্যাতি তো বিশ্বজোড়া। আর এসব কাপড় তৈরিতে প্রয়োজন রেশমি সুতা। রেশম পোকার আবাসেই তৈরি হয় এর তন্তু। বসবাস করে তুঁতগাছে। বর্তমানে মহাদেবপুরসহ নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ তুঁতের চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক দিক-নির্দেশনা পেলে রাজশাহীর পাশাপাশি নওগাঁর মহাদেবপুর হয়ে উঠতে পারে রেশম তৈরির আরেকটি সূতিকাগার; বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলেল গরিব জনগোষ্ঠীর জীবনধারা- এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

রেশম চাষি বেলাল হোসেন জানান, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর গ্রামে রেশম চাষে দ্রুত সাফল্য আসছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব জমি থেকে রেশম গুটি উৎপাদন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার সুতা পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী রেশম গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে উপজেলায় রেশম চাষ করা হয়। গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে রেশম চাষি হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ক্যানেলের প্রায় ২ হাজার মিটার রাস্তার পাশে তুঁতগাছ চাষ করছেন বেলাল হোসেন (৫৫)।

রেশম হচ্ছে এক ধরনের পোকার মুখ থেকে নির্গত লালা দ্বারা তৈরি আঠা, যা বাতাসে শুকিয়ে গিয়ে তৈরি হয় আঁশ বা সুতা। বিভিন্ন পশু-পাখির মতো এ পোকাগুলোও বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করে। এদের তৈরি ঘর বা খোল রেশম গুটি নামে পরিচিত। এই গুটিতে থাকে শুধু সুতা আর আঠা। গরম পানিতে রেশমের গুটি প্রয়োজনমতো সিদ্ধ করে নিয়ে সুতা উঠাতে হয়। সুতা উঠানোর পর মরা পোকাগুলোও ফেলনা নয়। এসবে থাকে আমিষ ও ফ্যাট। রেশম পোকার ফ্যাট দিয়ে বিভিন্ন মেশিনের লুব্রিকেটিং অয়েল তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন কসমেটিকস ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। আর আমিষ দিয়ে হাঁস, মুরগি, মাছের খাবারসহ জৈব সার তৈরি হয়।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়ক এবং ক্যানেলের পাশের্^ তুঁতগাছ চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে এবং লাভবানও হয়েছেন উদ্যোক্তারা। উপজেলায় আরও ৩ জন রেশমের চাষ শুরু করেছেন, তবে বেলাল হোসেন ব্যাপকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। চলতি বছর তিনি ১৫ কেজি রেশম উৎপাদন করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই সাথে সুতারও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। রেশম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 
Electronic Paper