যশোরের কুমড়ো বড়ির দখলে অনলাইন মার্কেট
বি এম ফারুক, যশোর
🕐 ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
শীত আসতেই যশোরের গ্রামে গ্রামে কুমড়ো দিয়ে বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম না। আগে পরিবার ও স্বজনদের জন্য তৈরির পাশাপাশি এবার তৈরি হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবেও। তরকারি ও মাছের ঝোলে বাড়তি স্বাদ পেতে ক্রেতারা ব্যস্ত কুমড়ো বড়ি কেনায়। পাইকারি বাজার দখল করতে না পারলেও কুমড়োর বড়ি দখল করে নিয়েছে অনলাইন মার্কেটের বিশাল অংশ। খুদে উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন অনলাইনভিত্তিক কুমড়ো বড়ি বিক্রি করছেন দেশজুড়ে। প্রবাসীদের কাছেও নাকি বেড়েছে চাহিদা। বিপণনে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি থাকলে কুমড়োর বড়ি হতে পারে যশোরের বাণিজ্যিক গর্ব- মনে করছেন খুদে উদ্যোক্তারা।
আগে দেশের কিছু জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকলেও কুমড়োর বড়ির চাহিদা ইদানীং ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কুমড়ো বড়ি পাওয়া যায়। তবে চালকুমড়ার সঙ্গে মাষকলাই ডাল মিশিয়ে তৈরি বড়ি জনপ্রিয়। অনেকে মূলার সঙ্গেও মেশান মাষকলাই। তারপর তৈরি করেন বড়ি। পৌষের মাঝামাঝিতে যশোরের গ্রামে গ্রামে ধুম পড়েছে এ বড়ি তৈরির কাজ। মণিরামপুর উপজেলার আসমা আক্তার ব্যস্ত ছিলেন চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরিতে। তিনি বলেন, ডাল ও কুমড়ো ভালোভাবে ফেটাতে হয়। তারপর সুতি কাপড়ের ওপরে দেওয়া হয় বড়ি। রোদে শুকাতে হয় অনেক দিন ধরে। বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে না পারলে বড়ির স্বাদ ও গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর খেতে ভালো লাগে না।
যশোরের বেনাপোলের গৃহিণী রহিমা আক্তার জানান, এ বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় ভরে অনেক দিন রাখা যায়। তরকারিতে দিলে খুব সুস্বাদু হয়। তিনি বলেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাষকলাই ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সেখান থেকেই খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয় ডাল। আর বড়ি দেওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় পাকা চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কুমড়োর পানি ঝরিয়ে নিতে কুমড়া মিহি করে কুরিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরদিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে মিহি করে বেটে পেস্ট তৈরি করতে হবে। পানি ঝরানো কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও পরিমাণ মতো লবণ মেশাতে হয়। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হয়। এরপর কয়েক দফায় রোদে শুকিয়ে নেওয়া ভালো। আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে তৈরি কুমড়ো বড়ি তেলে ভেজে মাছের তরকারি বা সবজিতে দিলে স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।
সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান, সখ করে খাবার পর্যায়ে এখন আর নেই কুমড়োর বড়ি। বিশেষ করে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খাবারটি এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নিয়েছে বাণিজ্যিকভাবে। অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায়। যশোরের অনলাইনভিত্তিক ‘কারুভূমি’র স্বত্বাধিকারী, সফল উদ্যোক্তা শিরিন সুলতানা জানান, কুমড়োর বড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে অনলাইন মার্কেটে। প্রবাসীদের কাছেও রয়েছে এর চাহিদা। কেজিপ্রতি লাভ মোটামুটি। মান অনুযায়ী সাড়ে ছয়শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন অনেকেই। তারই মতো আরেক উদ্যোক্তা জানান, যশোরের একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপণ্য এটি। শুকনো বিধায় সংরক্ষণ করা যায় সারা বছরই। কিন্তু বাণিজ্যিকীকরণে অনেকে খাবারের মান সরকারিভাবে পরীক্ষিত কি-না জানতে চান। অনেকে আবার বাধাগ্রস্তও করতে চান। যদি সরকারিভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এ পণ্য পরীক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হতো তাহলে আর কোনো বাধা থাকত না। কারুভূমির শিরিন বলেন, অনেক বিষয়ে উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলেও স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকারীদের ভাগ্যে তা জোটে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।