শীতে ছিন্নমূল মানুষের নির্ঘুম রাত
এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ৪:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
বেলা গড়ালেই বাড়ছে কুয়াশা, পুরো সকালে থাকছে শীতের দাপট। শীতল হাওয়ায় দুপুরেও তেজহীন সূর্য্য। বিত্তবানদের কাছে উপভোগ্য হলেও ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে দুর্বিষহ। সারাদিন নানা কাজ শেষে রেলওয়ে স্টেশন, খোলা মাঠ, বাসা-বাড়ি ও অফিস-আদালতের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া ছিন্নমূল মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন ও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
শীত থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনেকেই পলিথিন টানিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে-বসে আছেন। কেউ বা আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এমনই দৃশ্যছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা চলছে। তবে শীতার্র্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পুরাতন জেলখানা ঘাট এলাকার নুর-জাহান বেগম (৪০) ও স্বামী ঝন্টু শেখ (৪৮) বলেন, প্রায় ১৬ বছর আগে আমরা দুইজন পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতাম। দুজনের রোজগারে সংসার ভালোই চলছিল, কিন্তু আমাদের ভালো থাকাটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারি নাই। হঠাৎ করে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কের কড্ডার মোড় এলাকায় বাসের নিচে পড়ে স্ত্রী নুর-জাহানের একটি পা কেটে যায়। টাকা-পয়সা তেমন না থাকায় স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে চলতে হতো। চলতে চলতে স্ত্রী ও মেয়ে শিল্পী খাতুন (১৪) কে নিয়ে আজ পর্যন্ত রেলওয়ে স্টেশনে এসে রাত্রি যাপন করছি। শীতের এই রাতে পঙ্গু স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্ট করছি।
বাজার স্টেশন প্লাটফর্মে থাকা ভিক্ষুক ফুল ভানু (৯৫) বলেন, প্রায় ৪৫ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। যমুনা নদীতে বাড়ী ঘর-বিলিন হয়ে যাওয়ার পর একটি মেয়েকে নিয়ে শহরে আসি। কিন্তু কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায় রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে এসে জায়গা নিই। প্রায় ২০ বছর ধরে এখানেই আছি। গরমের সময় এখানে থাকতে তেমন অসুবিধা না হলেও শীতকালে বেশি অসুবিধা হয়। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে ঘুমানোই যাচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ঠান্ডার কারণে এই বয়সেই মাঝরাতে বসেই রাত পার করে দেনই তিনি। তাই আমি সারাদিন ভিক্ষা করে কোন রকম খেয়ে-না খেয়ে বেচে আছি। শীতে কাঁপতে কাঁপতে ছিন্নমূল আনিছুর রহমান (৫৫) বলেন, সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত শীত বেশি থাকে। কোন ধরনের কাপড়-চোপড়ও নেই। শীত নিবারণের একমাত্র উপায় একটা সুয়েটার। সারারাত বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই কাটিয়ে দিই।
শীতবস্ত্র কিংবা কোনো গরম কাপড় পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ওই দুইজন ভাস্যমান যৌনকর্মী পারভীন (৩৫) ও জুলেখা (৩৬) বলেন, আমরা দুই-তিন বছর ধরেই এখানে থাকি। অন্যবারের তুলনায় এবার রাতে শীত বেশি বেশি লাগছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের সাহায্য করেনি। আর যারা আসে তারা লোক দেখে দেখে কয়েকজনকে দিয়েই চলে যায়।