ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চলনবিলে গুড়-পাটালি তৈরির উৎসব

আশরাফুল ইসলাম রনি, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
🕐 ৪:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০

প্রকৃতিতে শীতের আগমন বার্তা জানান দিচ্ছে। বাঙালির শীতের দিনের অন্যতম আকর্ষণ খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা-পায়েস। প্রাচীন কাল থেকে সিরাজগঞ্জ তথা চলনবিল এলাকার খেজুর রসের যশ ছিল। দিন বদলের সঙ্গে এ এলাকা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি। জেলার তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ বছর রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া ও নাটোর থেকে প্রায় শতাধিক গাছি এসেছেন খেজুর রস সংগ্রহের জন্য। তারা গ্রামগুলোতে রস সংগ্রহের ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

শীত মৌসুমের আগমনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছিরা চলনবিল এলাকায় এসে গাছ মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। তারা প্রথমে খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করেন। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কলসে রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরের সূর্য ওঠার আগে গাছিরা রস ভর্তি মাটির কলস গাছ থেকে নামিয়ে পরে মাটির হাড়িতে কিংবা টিনের বড় হাড়িতে জ্বালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করেন। তাড়াশ উপজেলাসহ বিভিন্ন গ্রামগুলোতে ইতোমধ্যে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে নতুন খেজুর গুড়-পাটালি তৈরি করে বাজারজাত করছেন। গাছিরা এখন মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়-পাটালি তৈরির উৎসব। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরি করার ধুম পড়বে। সকালে এবং সন্ধ্যায় কাঁচা রস খেতে খুবই মজাদার। রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলেন, ঝোলা ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধ ভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা ও তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে।

শীত মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে তাই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদও বেশি।

বিভিন্ন এলাকায় ঘুওে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচার উপকরণ গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাঁড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত।

তাড়াশ উপজেলার কাস্তাএলাকায় কয়েকজন গাছি এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে তাদের একজন শাহ আলম জানান, গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়, পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গত বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম দ্বিগুণ হবে।

এ বছর তারা এলাকায় ৪০০টি গাছ মালিকদের সাড়ে তিন কেজি করে গুড় দেয়ার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, তাড়াশ উপজেলাসহ চলনবিল এলাকা খেজুর রস খুব মিষ্টি মধুর, তাছাড়া রস থেকে খেজুরের পাটালি গুড় তৈরি করা হয়। যা দিয়ে চলনবিলাঞ্চলের জনপদের মানুষ বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরি করে থাকেন।

 
Electronic Paper