ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পানিহার পাঠাগারের ২৭ হাজার বই রক্ষা

শ.ম সাজু, রাজশাহী
🕐 ৩:৪২ অপরাহ্ণ, মে ০৮, ২০১৮

বরেন্দ্র অঞ্চলে আলো ছড়াতে ১৯৪৫ সালে এনায়েত উল্লাহ নামে এক স্কুল শিক্ষক প্রতিষ্ঠা করেন পানিহার পাঠাগার। বিভিন্ন সময়ে পাঠাগারে এসে ঘুরে গেছেন পল্লীকবি জসিম উদ্দীন, কবি বন্দে আলী মিয়া, চারণ কবি আব্দুল মান্নান, অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী প্রভাস লাহিড়ী, ধীরেন দত্ত, আইনুদ্দিন চৌধুরীসহ আরও অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি। পাঠাগারতে দুর্লভ সব সংগ্রহ আর বিশাল বই বহরের টানে এখনো সেখানে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অনেক বইপ্রেমী।

রাজশাহী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের ডাইংপাড়া মোড়। সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে আঁকাবাঁকা সরু পথ পেরিয়ে ১২ কিলোমিটার দূরের গ্রাম আইহাই। এখান থেকে আর দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই পানিহার গ্রাম। শুষ্ক বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রত্যন্ত এ গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত। আসা-যাওয়ার সরু পাকা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেতে আদিবাসী নারীদের কর্মব্যস্ততা যেন অনেকটাই পটে আঁকা ছবির মতো! প্রত্যন্ত এলাকা হলে কী হবে, পানিহারের পরিচিতি কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও। পানিহার পাঠাগারের দুর্লভ আর বিশাল বই বহরের টানে এখনো ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অনেক বইপ্রেমী।
পানিহার পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা এনায়েত উল্লাহ গ্রামের লোকের কাছে এনায়েত পণ্ডিত নামে পরিচিত। তার বাবা ছিলেন কৃষক। লেখাপড়া না জানলেও তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী। এ কারণে ছেলেকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর হাইস্কুলে। বাংলা ১৩১৮ সালে ওই স্কুল থেকে এনায়েত উল্লাহ এন্ট্রান্স পাস করেন। তারপর সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। ওই সময় তিনি নবাব বাহাদুর হাইস্কুলের পাঠাগারের সদস্যও ছিলেন। ওই পাঠাগারে নিয়মিত পড়াশোনা করতেন তিনি। পরে গ্রামের টানে বাড়ি ফিরলেও বইয়ের মায়া ছাড়তে পারেননি এনায়েত পণ্ডিত। আর এ কারণেই নিজের গ্রামে একটা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেছিলেন তিনি। পানিহারে ফিরে তিনি আইহাই গ্রামে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্র সংগ্রহ করতেন। সে সময় স্কুলের ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য বই আনা হতো কলকাতা থেকে। এই বই কিনে পাওয়া কমিশন দিয়ে বই কেনা হতো পাঠাগারের জন্য। তখনো পাঠাগারের কোনো ভবন ছিল না। একটা, দুটো করে কেনা বইয়ের সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ল। এই বই দিয়েই তিনি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পানিহার পাঠাগার। আস্তে আস্তে বাড়ল বইয়ের সংখ্যা। প্রথমে বাড়ির একটি বৈঠক ঘরে স্থান পেয়েছিল বইগুলো। পরে নিজের বাড়ির সামনেই একটা মাটির ঘর তুলে সেখানেই স্থাপন করেন পাঠাগার ভবন। এখন পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা ২৭ হাজারেরও বেশি। ইংরেজি ও বাংলা ভাষার অনেক পুরাতন বইয়ের সংগ্রহ আছে এখানে। আছে কলকাতার রজনীকান্ত দাস সম্পাদিত শনিবারের চিঠি, মাসিক মোহাম্মদী থেকে শুরু করে দুই বাংলার অনেক সাময়িকী।
পাঠাগারের সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, এতদিন পাঠাগারের বইগুলো অরক্ষিত পড়ে ছিল। টিনের চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে নষ্ট হচ্ছিল বইগুলো। অমূল্য বইগুলো রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছিলেন গ্রামবাসী। এমন দশার কথা শুনে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রতি নতুন ভবন করে দেন।

 
Electronic Paper