ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নির্বাচন হয়নি ৯ বছর, ১৬ বছর ধরে একজনই চেয়ারম্যান-মেয়র

তিতাস, বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি
🕐 ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০

নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে প্রকাশিত গেজেটের বিরুদ্ধে মামলার কারণে ৯ বছর ধরে নির্বাচন বন্ধ আছে পৌরসভায়। ফলে ২০০৪ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার পর ২৬ জুলাই প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে ২০০৬ সালে প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তিতে ২০০৮ সালে পদবি পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন মোশাররফ হোসেন। বিগত ১৬ বছর ধরে একজনই প্রথমে পৌর প্রশাসক, পরে পৌর চেয়ারম্যান এবং ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন মোশাররফ হোসেন।

পৌর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘২০০৪ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা মোশাররফ হোসেন প্রথমে প্রশাসক, পরে চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রায় ১৬ বছরে পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করা হয়নি।’

পৌর বাসীন্দা মো. ময়মুর সুলতান বলেন, ‘নিজের লোকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের দিয়ে মামলা করিয়ে নির্বাচন আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছেন মেয়র মোশাররফ হোসেন। প্রায় ১৬ বছরে পৌরসভার কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। নেই কোনো পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই সড়ক বাতি এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। রাস্তা ঘাটেরও নেই কোন উন্নয়ন।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নিয়মিত পৌরসভার ভ্যাট ট্রাক্স পরিশোধ করলেও সকল সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসীরা।’

তবে মেয়র মোশাররফ হোসেন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে বলেন, ‘২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তৎকালীন সাংসদ আবু তালহা বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দাখিল করেন। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১০ সালে হাইকোর্টে মামলাটি দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। কিন্তু আমিও সবসময় নির্বাচনের পক্ষে আছি।’

নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম রাব্বী বলেন, ‘২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগাতিপাড়া পৌরসভা ২০০৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে মেয়াদ শেষ হলেও মহামান্য হাইকোর্টে মামলার কারণে এই পৌরসভার নির্বাচন দেয়া সম্ভব হয়নি। মামলাটি দায়ের করেন লক্ষণহাটি গ্রামের মৃত হামিদ মোল্লাার ছেলে মাইনুল ইসলাম। ২০১০ সালের ১৪ জুন মহামান্য হাইকোর্টে ৩৮৪৩ নং রিট মামলাটি করলে হাইকোর্ট থেকে রুল নিশি জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সলিসিটর উইং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তবে হাইকোটের কার্যতালিকায় এখনও মামলাটি আসেনি।’

গোলাম রাব্বী জানান, সারাদেশে পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আলোকে নাটোর জেলার সব পৌরসভার তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী বাগাতিপাড়াসহ জেলার সব পৌরসভার তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে। বাগাতিপাড়া পৌরসভা বিষয়েও মন্ত্রণালয় অবগত আছেন এবং সমস্ত আইনকানুন ও বিধি মেনে মন্ত্রণালয় নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, ‘পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও জনৈক ব্যক্তি বাগাতিপাড়া পৌরসভাটি আইনগতভাবে চলবে কি চলবে না, তার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সেখানে নির্বাচন বন্ধ আছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বাগাতিপাড়া পৌরসভার বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা রিটের আইনগত দিকসহ কী প্রতিকার চাওয়া হয়েছে, সেই বিষয়গুলোসহ বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে আমাদের মতামত পাঠিয়েছি।’

 
Electronic Paper