শত্রুমুক্ত হয় বরগুনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারদের হটিয়ে শত্রুমুক্ত হয় মুক্ত হয় বরগুনা। দেশকে মুক্ত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল অগণিত মানুষ। ভয়াল সেই স্মৃতির কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠেন অনেকে।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী তরুণরা রাইফেল, বন্দুক ও বাঁশের লাঠি নিয়ে বরগুনার বিভিন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির মধ্যে ২৬ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে। এ যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ভয়ে বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে যান। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনী ১৪ মে বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখলের পর পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর তীরে নির্মম গণহত্যা চালায়। তারপর অন্য থানাগুলো দখল করে পটুয়াখালী চলে যায়।
২৬ মে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন শাফায়াতের নেতৃত্বে চারজন পাকিস্তানি সেনা বরগুনা আসে এবং ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের জেলা কারাগারের দক্ষিণ পাশে গণকবর দেওয়া হয়।
এরপর দলে দলে তরুণ আধুনিক প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যায়। ফিরে আসে তারা বুকাবুনিয়ার সাব-সেক্টরের অধীনে। আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ২১ সদস্যের একটি দল ২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে বেতাগীর বদনীখালী নামক স্থানে অবস্থান নেয়। তারা একজন সহকর্মীকে রেকি করার জন্য বরগুনা পাঠায়।
তার সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি বড় বাচারী নৌকায় বিষখালী নদী দিয়ে বরগুনা রওনা হয়। রাত ৩টার দিকে তারা বরগুনার খাকদোন নদীর তীরে পোটকাখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন। সেদিন যার নেতৃত্বে বরগুনা মুক্ত করা হয়েছিল সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খান জানান, বরগুনাকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবে তারা বরগুনা কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়্যারলেস স্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
এরপর তারা হেঁটে বরগুনা শহরে এসে যে যার অবস্থান নেন। তারা ফজরের আজানকে অভিযান শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে আজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ৬টি স্থান থেকে একযোগে ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। রাজাকার এবং পাকিস্তানপন্থি পুলিশরা তখন নিরাপত্তার জন্য জেলখানায় আশ্রয় নিয়েছিল।
কোনো প্রতি উত্তর না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে জেলখানার দিকে অগ্রসর হয়। জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে তারা যান তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনের বাসায়। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণের পর তাকে নিয়ে আসা হয় তার অফিসে। সেখানে ট্রেজারির সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।