ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বালু তুলতে পদ্মায় বাঁধ

রাজশাহী ব্যুরো
🕐 ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২০

রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম তালাইমারী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ভরাট করা হচ্ছে পদ্মা নদী। সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী এই নদী ভরাট করছেন। এছাড়াও তিনি ইজারা নেওয়া বালুমহালের ৬-৭ কিলোমিটার বাইরে তালাইমারী এলাকায় (কাজলা মৌজা) দুইটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন। রজব আলী এ বছর রাজশাহীর দিয়াড়খিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, তালাইমারী ঘাট থেকে খানিকটা দূরে পদ্মা নদীর চর জেগেছে। ওই চরের পরে (দক্ষিণে) নদীর মূল ধারা প্রবাহিত। ওই চলে ড্রেজিং করে বালু মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে বালু আনতে পদ্মা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরি করতে গত মঙ্গলবার থেকে নদীর বাঁ তীর থেকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলার কাজ চলছে।

এর আগে গত বছর একইভাবে নদী ভরাট করে রাস্তা করা হয়েছিল। এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে গত বছর হাইকোটের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। ইজারাদারকে রাস্তা অপসারণ করে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। হাইকোর্টের সেই আদেশ এখনো বলবৎ থাকলেও আবারও সেই কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, চর জাগায় এবার নদীর মূলধারা এখান থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে। তবে পদ্মার বাঁ তীর ঘেঁষে রয়েছে জলধারা। পদ্মাপাড়ের লোকজন তাতেই গোসল ও কাপড়চোপড় ধোয়ার কাজ করেন। সেখানে রাস্তা তৈরি করে বালু তোলা শুরু হলে তারা এখানে গোসল করতে পারবেন না। এখানে জনসমাগম হবে। সবসময় ট্রাক যাতায়াত করবে। ধুলাবালি উড়বে। এছাড়াও এপথে বালু পরিবহন করা হলে ব্যস্ততম তালাইমারী এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

তবে বালুমহাল ইজারাদার ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলী বলেন, চার থেকে বালু তুলে নিয়ে আসার জন্য একটা রাস্তা তৈরি করছি। সেখানে এখন নদী নেই। এখনো কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি তার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহীর সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, পানি থাকুক আর না থাকুক, নদীর জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এটা দেশের প্রচলিত আইনে দ-নীয় অপরাধ। এ আইনে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী রক্ষা কমিশনের জেলা ও বিভাগীয় কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারে।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম বলেন, এবার শুধু দিয়াড়খিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু তোলার কথা নয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এটি ছিল চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর বালুমহাল। এ কারণে তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ ছিল। কিন্তু এই ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্ট রিট করা হয়। ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর সেখান দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে চলতি বছরের ৩ মে বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই বালুমহালটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সভায় দিয়াড়খিদিরপুর ও চরশ্যামপুর নামে নতুন বালুমহাল করা হয়। যা তালাইমারী এলাকা থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরে।

 
Electronic Paper