বাঁওড়ে ফিরছে দেশি মাছ
লাবু হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
🕐 ১২:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০
বাঁওড়ে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে গবেষণা চালাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-এর সার্বিক সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হওয়া প্রকল্পটির অধীনে ইতিমধ্যে ৮ প্রজাতির দেশি মাছ বাঁওড়ে মজুদও করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ফেরানো গেলে বাঁওড় নির্ভর ৮৪ হাজার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হবে এ প্রত্যাশা তাদের।
বাঁওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাঁওড়-সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর উপার্জন ও পুষ্টিচাহিদা পূরণে কাজ করা প্রোগ্রাম বেসড্ রিসার্চ গ্র্যান্টস (পিবিআরজি)- এর ১৫৪ নং প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন ও ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিন। সহকারী প্রকল্প পরিচালক একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন।
অধ্যাপক ইয়ামিন বলেন, বিলুপ্তির পথে থাকা দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ফিরিয়ে আনতে গত বছরের অক্টোবরে আমাদের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঝিনাইদহের সার্জাত ও সাগান্না এই দুটি বাঁওড়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক বছর শেষ না হতেই আটটি প্রজাতির মাছ ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। যার মধ্যে কই, শিং, দেশি মাগুর, পাবদা, গুলশা টেংরা, ছোট টেংরা, বাজারী টেংরা এবং টাকি পার্শ্ববর্তী বিল এবং নদী হতে সংগ্রহ করে বাঁওড়ে মজুদ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত আগস্টে পাবদা, গুলশা টেংরার প্রজননের বিষয়টি জানতে পারেন গবেষকরা।
তিনি আরও বলেন, বাঁওড় দুটিতে বাকি দেশি মাছগুলো প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রজনন করছে। ডিম দিচ্ছে এবং বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি প্রকল্পটির শেষে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে। স্থানীয় জেলেদের জন্য নীতিমালা থাকায় ফেরানো মাছগুলো বাঁওড়ে স্থায়িত্ব পাবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বাঁওড়গুলোতে বার্ষিক গড় মৎস্য উৎপাদন ৭,৭২৯ মেট্রিক টন করা সম্ভব।
প্রকল্পটির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিন বলেন, দেশে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিল। বর্তমানে অত্যাধিক পরিমাণে কার্প জাতীয় মাছ চাষের ফলে বাঁওড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ। আমরা যেসব মাছ বাঁওড়ে ছাড়ছি সেগুলো আহরণ করে স্থানীয় জেলেরা সুবিধা পাচ্ছে। মাছগুলোর দেখভাল ওই অঞ্চলের জেলেরাই করছে এবং তারা মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের গবেষণার সঙ্গে জড়িত বলেও জানান তিনি। যারা নিয়মিত বাঁওড়গুলোতে পানির তাপমাত্রা এবং মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশীয় মাছ নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে।
পাশাপাশি বাঁওড়গুলোতে মাছের বৈচিত্র্য সূচক নির্ধারণের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে সহায়তা করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণা দল।