দুর্গম পদ্মার চরে ভরসা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল
নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী)
🕐 ৬:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২০
রাজশাহী পদ্মার চরের মানুষের বাহনের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। চরের একটি গ্রামের অন্তত ৪০ জন যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন।
গ্রামটির নাম চর মাজারদিয়া। এটি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটি রাজশাহী শহরের সামনে, পদ্মা নদীর ওপারে। একেবারেই ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রাম পড়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের দামকুড়া থানার অধীনে।
চর মাজারদিয়া যেতে হলে শহরের পাশ দিয়েই বহমান পদ্মা নদীতে নৌকায় চড়তে হয়। বর্তমানে পদ্মা ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। বেড়েছে পায়ে হাঁটা পথ। এই চরের বালু, কাঁদা আর হাঁটুপানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল।
চরযাত্রা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে বাইকগুলো। চর মাজারদিয়া যাওয়ার সময় প্রায় দুই কিলোমিটার নৌকায় যাওয়া যায়। এরপর মাঝনদীতে এসে বালুচরে থেমে যায় নৌকা। তারপরই পাওয়া যায় ভাড়ায় চালিত সারি সারি মোটরবাইক।
এই বাইকে প্রায় দু’কিলোমিটার যাওয়ার পর আবার পাওয়া যায় ছোট একটি নদী। সেটিও পদ্মারই একটি অংশ। বাইকগুলো এই নদীতে নৌকায় ওঠানো হলো। বাইকের চালক-আরোহীরাও উঠলেন নৌকায়। নৌকা তীরে পৌঁছানোর পর নামার মতো আর ঘাট নেই। একটি তক্তার মাধ্যমে পানিতে প্রথমে নামল মোটরসাইকেল। চেপে বসলেন চালক। তারপরই চালকের পেছনে নৌকা থেকেই উঠে বসলেন আরোহীরা। বাইক আবার ছুটল।
দু’পাশে কখনও ফসলের ক্ষেত আবার কখনও শুধু বালুপথ পাড়ি দিয়ে বাইক চলছে বেশ গতিতে। দেখা গেল, চালকেরা খুব দক্ষ। সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চলতে তাদের কোন সমস্যায় হচ্ছে না। ধুলো-বালি পাড়ি দিয়ে বাইকগুলো ছুটে চলছে চর মাজারদিয়া গ্রামের দিকে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ পথে বাইক চালাতে পারেন। এখানে অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তাদের কেউ ধরে না। এই বাইকের আরোহী হয়েছিলেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব।
তার বক্তব্য ‘এখানকার চালকেরা খুব দক্ষ। কিন্তু এমন রাস্তায় বাইকে চলা খুব ভয়ের। দুরু দুরু বুকে এই বাইকে চড়েই এলাম। ভয় হলেও যাত্রাটা ছিল আনন্দদায়ক।’
চর মাজারদিয়া গ্রামের যুবক শামিম হোসেন (২৯) পাঁচ বছর ধরে ভাড়ায় বাইক চালান। তিনি জানালেন, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয় তার। নদীপাড় থেকে গ্রামে এনে দিলে একজন আরোহী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেন। যারা গ্রামে নিয়মিত আসেন তারা ফোন নম্বর রাখেন। ফোন করলেই তারা নদীপাড়ে চলে যান। আরোহীকে নিয়ে আসেন। কাজ শেষে আবার নদীতীরে রেখে আসেন।
আরেক বাইক চালক মনিরুল ইসলাম জানালেন, আগে তিনি গরু চরাতেন। কিন্তু দিন দিন চরে চাষবাস বেড়ে যায়। কমে যায় গো-চারণভূমি। তাই তিনিও বাইক চালানো শুরু করেন। তার মতো ৩৫ থেকে ৪০ জন যুবক বাইক চালান। এদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন সব সময় বাইক চালান। বাকিরা মাঝে মাঝে চালান। এই চরে পুলিশ-প্রশাসনের বড় কর্তা বা জনপ্রতিনিধিদের যিনিই আসেন না কেন তাদের ডাকা হয়। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকেন। গত মঙ্গলবার আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকও দুর্গম এই চরে আসেন এই বাইকে চড়ে।
পবার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, চরে চলাচল অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে ভাড়ায় চালিত বাইক। আগে দেখা যেত চলাচলের সমস্যার কারণেই অনেকে এই চরে আসতেন না। এখন সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আসেন। আমরা অনেক উপকৃত হচ্ছি।