ঘুষের বেড়াজালে রাজশাহী সমবায়
জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী
🕐 ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২০
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সমবায় অফিসে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে মেলে না সমিতির নিবন্ধন। অনেকেই আবার চাহিদামতো ঘুষ দিয়েও পাচ্ছেন না নিবন্ধন। দিনের পর দিন ধরনা দিচ্ছেন অফিসে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কাওসার আলীর ইশারায় চলছে এসব দুর্নীতি-অনিয়ম বলে রয়েছে অভিযোগ। ইতিমধ্যে সমবায় অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ যোগ দেন কাওসার আলী। এরপর থেকেই প্রকাশ্যেই শুরু করেন ঘুষবাণিজ্য। নিবন্ধনের নামে বেঁধে দেন ঘুষের পরিমাণ। প্রথম দিকে ঘুষ দিয়ে সমিতির নিবন্ধন করান অনেকেই। পরে তার চাহিদা আরও বেড়ে যায়। বাড়িয়ে দেওয়া হয় ঘুষের পরিমাণও। ফলে বিপাকে পড়েন নিবন্ধন প্রত্যাশীরা। এদিকে চাহিদা মেটাতে না পারায় বেশ কয়টি সমিতির নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত করে দেন এই কর্মকর্তা। আরও জানা গেছে, কাউকে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ আছে মনে করলে তার সমিতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা হওয়ার পরও গায়েব করে দেওয়া হয়। পরে কাগজপত্র না থাকার অভিযোগ তুলে সমিতি নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী লোকজন গত ৯ অক্টোবর সমবায় অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত ওই অভিযোগে ১২ জন ভুক্তভোগী স্বাক্ষর করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সমবায় অফিসার কাওসার আলী দুর্গাপুরে যোগদান করার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ দিনের মধ্যে সমবায় সমিতি নিবন্ধন দেওয়ার কথা বলে প্রতিটি সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও সমিতির নিবন্ধন না পেয়ে ভুক্তভোগী লোকজন কাওসার আলীর কাছে গিয়ে সমিতি নিবন্ধনের জন্য ঘুরতে থাকেন। কিন্তু ঘুষের টাকা কম হওয়ায় তিনি নিবন্ধন দেননি। কাওসার আলীর চাহিদামতো ঘুষের টাকা দিতে না পারায় ২৫ থেকে ৩০টি সমিতির নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত আছে। এসব সমিতির মধ্যে ১২ জন লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মহিপাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নান্নু গাজীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা, মাড়িয়া ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নাদের আলীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা, চৌবাড়িয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ আলীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা, পূর্ব সিংগা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, হোজা অনন্তকান্দি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসাইনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, কলনটিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মফিজ উদ্দিনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, সূর্যভাগ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মকসেদ আলীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বরিদ বাঁশাইল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রুস্তম আলীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, শানপুকুরিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু হানিফের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, সাহাবাজপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নানের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, পানানগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নাদিম মোস্তফার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, সূর্যভাগ মৎস্য চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি আজের আলীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বেলঘরিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং সিংগা গ্রামের হৃদয়ের কাছ থেকে সমবায় অফিসার কাওসার আলী নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা ও পিয়ন কৌশিক নিয়েছেন ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া সামাদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগী এসব লোকজন সমবায় অফিসার কাওসার আলীর চাহিদামতো ঘুষের টাকা পরিশোধ করেও গত ৩ বছরে করাতে পারেননি সমিতির নিবন্ধন। এদের মধ্যে অনেকেই সমিতির নিবন্ধনের জন্য কাওসার আলীকে চাপ দিলে ফাইল থেকে কাগজপত্র গায়েব করে দিয়ে উল্টো ওই ব্যক্তিকেই ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় অফিসার কাওসার আলী ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ফাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সমিতিগুলোর নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে নিবন্ধন দেওয়া হবে।
এদিকে, সমবায় অধিদফতরের যুগ্ম নিবন্ধক আব্দুল মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।