রাজশাহীতে গড়ে উঠছে অবৈধ ভবন
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাজশাহীতে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। আইনের ধার ধারছেন না ভবন-মালিকরা। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাগিয়ে নিচ্ছেন অনুমোদন। আবার বহুতল ভবনের অনুমোদন না মিললে ৫তলা অনুমোদন নিয়েই গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। টাকার বিনিময়ে সেখানে নাকি অনুমোদন মিলে যায় বলে জানানো হয়েছে ওই অভিযোগে। এদিকে জায়গায় জায়গায় মাথা উঁচু করে ওঠা এসব ভবন থেকে দেখা দিয়েছে প্রাণহানির আশঙ্কা। বাড়ছে নানাবিধ ঝুঁকি।
এখনই দেখভাল করা না হলে নগরীতে নেমে আসতে পারে মহাবিপদ বলে মনে করছেন নগরবাসী। জানা যায়, রাজশাহী নগরীতে ২০০৯ সাল থেকে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর আগে নগরীতে ১০তলা ভবন বলতে ছিল কেবল সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জীবনবীমার ভবনটি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ১০ তলা ভবন এখন ৫০টির বেশি।
নগর ভবন থেকে শুরু করে আশপাশে আরও চারটি এবং সাহেববাজার এলাকায় ১০টি, আলুপট্টির মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সাগরপাড়া, উপশহর, বর্ণালীর মোড়, আমবাগান, তেরোখাদিয়া, সিপাইপাড়া, কাজীহাটা ও পদ্মা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভবন। আর ১০ তলার নিচে এবং পাঁচ তলার ঊর্ধ্বে ভবনের সংখ্যা কয়েকশ’। এখন নগরীতে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন নিতে হয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ)। আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে নগরীতে ৬০০ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর মধ্যে পাঁচ তলা পর্যন্ত ৫৬৫টি এবং ছয়ের অধিক তলা ভবনের অনুমোদন ছিল ৩৫টির। ২০১৪ সালে অনুমোদন দেওয়া হয় ৫০২টির। এর মধ্যে ৪৮৬টি পাঁচতলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন ৩৫টি। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫৪টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৬টি পাঁচ তলা পর্যন্ত এবং ছয়ের অধিক তলার ভবন অনুমোদন ছিল ৩৩টি। এর পরের ৪ বছরে আরও অন্তত দেড় হাজার ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আরডিএর অথরাইজড অফিসার থেকে শুরু করে নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে গুনতে হয় লাখ লাখ টাকা। আর টাকা দিলেই জমির শ্রেণি বদলেও মেলে নকশার অনুমোদন। আবার টাকার বিনিময়েই কখনো কখনো মাস্টারপ্ল্যান লঙ্ঘন করেও দেওয়া হয় ভবনের অনুমোদন। ফলে রাজশাহী ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নগরী হয়ে উঠছে।
এদিকে আরডিএ থেকে ৫ তলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়ে নগরীতে ৮০ ভাগের বেশি বহুতল (১০-১২ তলা) গড়ে তোলা হয়েছে। আর এসব ভবনের বিষয়ে আরডিএ কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। যদিও ভবন অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয় না জানিয়ে আরডিএর অথরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, নিয়মের মধ্যে থেকেই ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোথাও কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। তবে ভবন মালিকরা যে নিয়ম মানেন না সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন আরডিএর এ কর্মকর্তা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ভবন মালিকরা ভবন করতে গিয়ে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। আরডিএ সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলাসহ নোটিশ করছে।
এদিকে সিটি করপোরশেন এলাকায় ভবন নির্মাণে আরডিএর পাশাপাশি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শুধু নতুন ভবন নির্মাণই নয়, পুনঃনির্মাণের ক্ষেত্রেও রাসিকের অনুমতি লাগবে। এ ব্যাপারে একটি উপ-আইন তৈরি করতে যাচ্ছে নগর সংস্থা।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের একটি প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভবন নির্মাণের পূর্বে আরডিএর পাশপাশি সিটি করপোরেশনের কাছ থেকেও অনাপত্তিপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নগরীতে বিগত সময়ে তেমন বহুতল ভবন ছিল না। গত ১০ বছর থেকে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে আরডিএর নিয়ম মেনেই করতে হবে বলেও জানান তিনি।