সমস্যায় জর্জরিত বিএমডিএ
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ১:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০২০
বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিষ্ঠানটির কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। অর্থাৎ পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত যে বেতন কাঠামো ও অর্গানোগ্রাম রয়েছে সরকারিভাবে তার কোনো অনুমোদন নেই। নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস পরপর বোর্ড সভা হওয়ার কথা। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে কোনো বোর্ড সভা হয়নি। প্রকৌশলীদের মধ্যে বিভক্তি, কর্মচারী ইউনিয়ন নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, বিপুল অংকের টাকা অডিট আপত্তি, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে ধীরগতি, প্রাপ্যতার চেয়ে অতিরিক্ত বেতন-ভাতা ও উচ্চতর স্কেল প্রদান, ইতোপূর্বে টেন্ডার ছাড়াই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কোটি কোটি টাকার কোটেশন দেওয়া, সিন্ডিকেটের আধিপত্যসহ আরও নানা কারণে বিএমডিএ এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো কাজেই গতি নেই। আর এসব কর্মকা-ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সিন্ডিকেটের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বিএমডিএ’র তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেনÑ বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শ্যাম কিশোর রায় ও সচিব সুমন্ত কুমার বসাক। এতে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন। অধঃস্তন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেকের মধ্যে কাজে আনাড়ি ও শৈথিল্য ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএমডিএ’র একাধিক সূত্র জানায়, বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিন দিনও অফিস করেননি। তিনি বেশির ভাগ সময়ই ঢাকায় অবস্থান করেন। এছাড়া তিনি কখন কোথায় থাকেন সে সম্পর্কে বিএমডিএ’র অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই অবগত নন।
শ্যাম কিশোর রায় চলতি বছরের শুরুতে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। এরপর তিনি মাস খানেক নিয়মিত অফিস করেন। এছাড়া তার সঠিক সময়ে অফিসে আসার কোনো নজির নেই। অধিকাংশ দিনই এমন হয়েছে- যেদিন অফিসে আসেন, সেদিন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা বা ১২টা অতিক্রান্ত হয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক থেকে আবার বাসায় ফিরে যান। বাসায় বসেই কিছু দাফতরিক কাজ করেন তিনি।
সচিব সুমন্ত কুমার বসাক গত ৮ মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ থেকে সাত দিন অফিস করেছেন বলে জানা গেছে। দাফতরিক কিছু কাজ তিনি বাসায় থেকেই করেন। তবে নিয়মিত অফিস না করার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পেন্ডিং থেকে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বিএমডিএ’তে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে অনেকে ধারণা করেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে পূর্ণাঙ্গভাবে কাউকে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। সিন্ডিকেটমুক্ত হবে ও গতি পাবে এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি। পূর্ণাঙ্গভাবে নতুন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে আগের অবস্থাই বহাল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। সেসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত জানুয়ারির শুরুতে যুগ্মসচিব শ্যাম কিশোর রায় নতুন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও প্রতিষ্ঠানটিকে অচলাবস্থা থেকে সচল ও গতিশীল করতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
বিএমডিএ’র নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বিএমডিএতে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট আধিপত্য বজায় রেখেছে। এখনও এদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ের একজন নারী সহকারী প্রকৌশলীও রয়েছেন। এই নারী সহকারী প্রকৌশলী সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের খুবই আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিশোর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিএমডিএ’র সচিব সুমন্ত কুমার বসাকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি। ফলে এ ব্যাপারে তার বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকেও কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। পরে তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অপর একজন কল রিসিভ করে বলেন, তিনিই (চেয়ারম্যান) আপনাকে কল করবেন। এরপর তিনি আর কল করেননি। ফলে এ ব্যাপারে তার বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।