বয়স্ক-ভাতাসহ সরকারি সুবিধা জোটেনি সাদেক ছকিনাদের
টি. এম. মামুন, বগুড়া
🕐 ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৬, ২০২০
বয়স্কভাতা পাননি সাদেক আলী, সরকারি সহায়তা পাননি ছকিনা বেগম এবং স্বামী পরিত্যক্ত কমেলা বেগম। কেবল এই তিনজনই নয়, বগুড়া জেলায় সম্বলহীন, হতদরিদ্র ও দুস্থ অনেকে রয়েছেন যাদের খোঁজ রাখছেন না জনপ্রতিনিধিরা। জানতে চাইলে গদবাঁধা সেই কথা, খোঁজ নিয়ে যোগ্য প্রাপ্য হলে সাহায্য নিশ্চিত করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার সারিয়াকান্দী উপজেলার আউচারপাড়ার মৃত খেরু বেপারীর ছেলে ছাদেক আলীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ০৬ জুলাই। নদীর করাল গ্রাসে জমিজমা, ঘরবাড়ি, ভিটামাটি সব হারিয়েছেন। ৪ ছেলে মেয়ের বিয়ের পর বাবাকে ছাড়াই পৃথক সংসারের ঘানি টানছেন তারা। রোগ-শোক দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে স্ত্রীকে নিয়ে অভাব-অনটনে দিনাতিপাত।
ভাগ্যে জোটেনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বয়স্ক-ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা। জোটেনি করোনাকালীন সহায়তা বা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঈদ উপহারের নগদ আড়াই হাজার টাকাও। একই অবস্থা ১৯৪২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা গাবতলী উপজেলার পাইকারপাড়ার মৃত আব্বাস পাইকারের ছেলে আফতাব হোসেনের।
সোনাতলা উপজেলার পূর্ব তেকানী গ্রামের মৃত গাজি বেপারীর স্ত্রী বাবা হারা ছকিনা বেগমের জন্ম ১৯৫৭ সালে ১৩ জুন। ওষুধ পথ্যের কষ্ট নিয়ে দিনমজুর ছেলের সংসারে থাকলেও সম্প্রতি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মানুষের দুয়ারে ঘুরে অতিকষ্টে আছেন। মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় বাবা-মা হারানো একই এলাকার কমেলা বেগমের জন্ম ১৯৬০ সালের ২ মে। বয়োবৃদ্ধ স্বামী হায়দার খন্দকার তাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। পৃথক সংসার গড়েছে সন্তানরা। জোটেনি সরকারি কোনো সহায়তা।
জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী অকাল বিধবা সাজু হোসেন ও মা শিরি বেগমের মেয়ে সাথী আক্তারের বসবাস সদর উপজেলার রাজাপুর কারিগর পাড়ায়। ডানহাতের কনুই পর্যন্ত নেই, কাজ করেন বাম হাত দিয়ে। ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় বিয়ে হয় পাশর্^বর্তী কর্ণপুর গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মকসেদ হোসেনের সঙ্গে। ৩ বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মকসেদ, বিধবা হয় সাথী। স্বামীর মৃত্যুতে বাবার বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সন্তানের এই জননী।
ধুনট উপজেলার নিমগাছী এলাকার আকমল হোসেন ও অরোরা বেগমের মেয়ে সন্তান মিলি খাতুন সরকারি নিবন্ধনযুক্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী। সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি পরিচয়পত্র পেলেও প্রতিবন্ধী ভাতা মেলেনি। স্বামী পরিত্যক্ত হয়েও দুই বছরের শিশু মেয়েসহ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বিএ পাস করেন। প্রাইভেট পড়িয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করছেন। চলমান করোনা দুর্যোগে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ও ঈদ উপহার তো মেলেইনি বরং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধীর জন্য বরাদ্দ সহায়তাও জোটেনি।
স্বামী রিকশাভ্যান চালক আনিছ লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হওয়ায় করোনা দুর্যোগে দিশেহারা সারিয়াকান্দী উপজেলার কুপতলা পূর্বপাড়ার খাদেম আলীর মেয়ে কর্মহীন মরিয়ম। স্বামীর অবর্তমানে ৩ সন্তানকে নিয়ে সরকারি অর্থ সহায়তা সহায়তার অভাবে তিনি। এমনি অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলার গাবতলী উপজেলার উঞ্চুরখী মধ্যপাড়ার মৃত গোলাম ফকিরের ছেলে বাবলু ফকির, সোনাতলা উপজেলার পূর্ব তেকানি গ্রামের গাজি ব্যাপারীর মেয়ে স্বামী পরিত্যক্ত বাবাহারা দুই সন্তানের জননী প্রতিবন্ধী লাবলী বেগম, শাজাহনপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাবা মৃত মোজাফ্ফর রহমানের অকাল বিধবা প্রতিবন্ধী মেয়ে ও মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী মানোয়ারা খাতুন এবং ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ী গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত আর্জিনা আকতারসহ অনেকে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে জাতি। তাহলে হতদরিদ্র সম্বলহীনসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কাঠামোগত বাধাগুলো দূর করা জরুরি। অন্যথায় টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সমাজ সেবা অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মোহাম্মদ কাওছার জানান, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকলে পুরুষদের জন্য ষাটোর্ধ এবং নারীদের জন্য ৬২ ঊর্ধ্ব বয়স হলেই বয়স্ক-ভাতা পাওয়ার যোগ্য। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর হলেই চলবে। তৃণমূল পর্যায়ে বিষয়গুলো জনপ্রতিনিধিরা দেখভাল করেন। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ বেশ খানিকটা কম। তথাপি বিষয়গুলো জানামাত্রই যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছে অধিদফতর।