রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা
টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি
রাজশাহী ব্যুরো
🕐 ৪:২০ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২০
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশজুড়ে চলছে ঘোষিত লকডাউন। এর মধ্যে খাবারসহ জরুরী সার্ভিসের যানবাহনগুলোই শুধু চলাচল করছে। সবকিছু বন্ধ রাখা হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভায় চলছে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে। এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশার মধ্যে পড়েছে শ্রমিকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ হেডকোয়াটার্স কর্তৃক জারীকৃত সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ি সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে পণ্য পরিবহন নিশ্চিতকরণের লক্ষে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা কর্তৃক মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহন হতে কোন ধরনের টোল না আদায় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু আড়ানীতে এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বিচারে টোল আদায় করা হচ্ছে, যা সরকারি সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন এবং সারাদেশে সুষ্ঠু পরিবহণ নিশ্চিতকরনের পরিপন্থী। এই টোল আদায় করছেন আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া গ্রামের তৈয়বুর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন ও মাষ্টারপাড়া গ্রামের মৃত রফিজ উদ্দিনের ছেলে লেলিন হোসেন। এই দুইজন মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে কাউকে কোন তোয়াক্কা না করে টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন আড়ানী শাখার সভাপতি রায়হান কবীর বলেন, আমার কাছে টোল আদায়ের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শ্রমিকরা। আমি বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় লিখিতভাবে এ বিষয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর সাময়িকভাবে বাঘা থানার পুলিশ এসে টোল আদায় বন্ধ করলেও আবারো টোল আদায় শুরু হয়েছে। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের টোল আদায়কারীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে জানান রায়হান কবীর।
এদিকে, গত শুক্রবার স্থানীয় এক সাংবাদিক ওই পথ দিয়ে যাওয়ার পথে তার পথরোধ করেন টোল আদায়কারী ফারুক হোসেন ও লেলিন হোসেন। তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে সাংবাদিককে চাপ দেন। ওই সাংবাদিক মেয়রের সাথে পরে দেখা করবেন জানালে তারা সাংবাদিকের মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলতে বলেন যে, এখানে কোন চাঁদাবাজি হচ্ছে না।
বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি, মন্ত্রীর রাজনৈতিক এপিএস এবং সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের অবগত করা হয়েছে। কিন্তু ওই চাঁদাবাজদের ব্যাপারে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে প্রেস ক্লাবের সকল সাংবাদিক টোল আদায়কারী লেলিন ও ফারুকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ট্রাকচালক রনি আহম্মেদ বলেন, প্রশাসনের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে আমি স্বাক্ষর করায় আমাকে টোল আদায়কারী ফারুক হোসেন ও লেলিন হোসেনসহ কয়েকজন গালিগালাজ করেছে। তারা আমাকে মারপিটের হুমকি দিয়েছে।
সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের আড়ানী শাখার সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান দেশের ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করে এবং সরকারের আদেশ বাস্তবায়নের জন্যে এই চাঁদাবাজি বন্ধের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করেছি। তাই টোল আদায়কারীরা আমাকে মারধরের হুমকি দিয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু কেন টোল আদায় হচ্ছে, তা মেয়র মুক্তার সঠিক বলতে পারবেন। আমি ইউনিয়নগুলো দেখভাল করি। পৌরসভা স্থানীয় সরকার দেখভাল করেন।
আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী বলেন, অভিযোগের পর টোল আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে আমার অজান্তে কেউ দোল আদায় করলে অবশ্যই পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।