ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আইসোলেশন ইউনিটের দুঃখকথন

টি. এম. মামুন, বগুড়া
🕐 ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২০

নেই স্থানীয়ভাবে করোনা ভাইরাজ জনিত রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা, নেই প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকা (নার্স) ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা ওয়ার্ড বয়। হাতে পৌঁছেনি চিকিৎসকদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যথেষ্ট পরিমান নিরাপত্তা সরঞ্জাম পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট)। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এমন তথ্যই পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে ঘোষিত ‘আইসোলেশন ইউনিট’ সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করনের কোন সুযোগ নেই। অক্রান্ত রোগীর পরীক্ষা করতে করতে হয়তো জীবনাবসান হতে পারে। তবুও এসব কিছু নিয়ে কথা বলা ঠিক হবেনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতো তিনিও চান, রোগীর সঠিক সেবা করতে। কিন্তু সর্বপ্রথম প্রয়োজন রোগ নির্ণয়, এরপর প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয়। যার কোনটিই এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকলে কোনভাবেই এ ধরনের রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তবুও আইসোলেশন ঘোষণা করে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমরা অনেকটাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। 

বগুড়া সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ শফিক আমিন কাজল জানান, ৩০ জনের একটি চিকিৎসকের একটি ডিউটি রোস্টার তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনের কোভিড-১৯ সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। তারা অন্য চিকিৎসকদের শিখিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকরা রোগীকে ৪৮ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি ১৪ দিনের জন্য সেফ হোম কোয়ারেন্টানে যাবেন।

তিনি জানান, হাসপাতালের আইসিইউ, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের সংকট রয়েছে। পিপিই ওয়ান টাইম (একবার ব্যবহারের জন্য) মাত্র ৪০০টি আছে। যেখানে প্রতিদিন ৪০টির মতো প্রয়োজন হবে। হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো এখন মাত্র ৩০টি সিলিন্ডার রয়েছে। এছাড়া ১৫২ জন সেবিকার মধ্যে কারও এই রোগের এর প্রশিক্ষণ নেই। করোনা আক্রন্তদের জন্য ১২০ শয্যা তৈরি থাকলেও রোগীর চাপ বেড়ে গেলে প্রয়াজনে আরও বেড বাড়ানো যাবে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ ওয়াদুদ জানান, এখানে হাসপাতালের ১৪ টি বেড করোনায় আক্রান্তদের জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও সন্দেহভাজন রোগীদের প্রথমে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানরা অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।

সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ.টি.এম. নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, বর্তমানে এখানে তিনজন রোগীর চিকিৎসা চলছে আইসোলেন ইউনিটে। যদিও করোনা আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক। এখানে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে কিছু করার নেই, প্রয়োজন লাইনের অক্সিজেন।

কিন্তু এসব সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। ইউনিটটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ১০ বেডের আইসিইউ, পিপিই ৫ হাজার, অক্সিজেন সিলিন্ডার ৫০টি, নেবুলাইজার ১০০ সেট, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, বায়ো কেমিক্যাল অ্যানালাইজার, কিট, প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম, ওষুধ ও লোকবল চাওয়া হয়। ইতিমধ্যে ৪০০ পিপিই এসেছে। আপাতত বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল থেকে দুই বেড আইসিইউ এর জন্য ভেন্টিলেটর ও কিছু সরঞ্জাম আনা হয়েছে।

বগুড়ার সিভিল সার্জন ডাঃ গওছুল আজিম চৌধুরী জানান, চিকিৎসকরা না বাঁচলে রোগীর সেবা কীভাবে সম্ভব। যেহেতু পিপিই গুলো ‘ওয়ান টাইম’ (একবার ব্যবহার যোগ্য)। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই-এর ব্যবস্থা করা। এ পর্যন্ত ১০০টি পিপিই পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জন্য কতগুলো রাখা যাবে এবং জেলার অন্য ১১টি উপজেলার হাসপাতালের জন্য কি রাখবো।

 
Electronic Paper