ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৫ টাকা লিটারে গরুর দুধ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২০

বর্তমান সময়ের ভয়ানক নীরব ঘাতকের নাম হচ্ছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। আক্রান্ত ছাড়াও প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন।

করোনা বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, যানবাহনসহ সব কিছুতে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটা কারখানা তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এ কারণে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার দেড় লাখ দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষকের উৎপাদিত গরুর দুধ খুচরা বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হলেও শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ননভ্যাট দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকা লিটার দরে। অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি সত্য বলে জানিয়েছেন এ সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী।

তিনি জানান, বাজারে ক্রেতা নেই। তাই কৃষকের কিছুটা লোকসান ঠেকাতে দুধ থেকে মেশিনের সাহায্যে পুরো ভ্যাট তুলে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ননভ্যাট দুধ ৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ সহজেই দুধ কিনে খেতে পারছেন। ভ্যাট তুলে নিলেও দুধের গুণগতমান ঠিক থাকে। স্বাদের দিক দিয়ে একটু কম হয়।

এ ননভ্যাট দুধ দিয়ে দই, মিষ্টি, পায়েশ, পিঠা সব কিছুই তৈরি করা যায়। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো। তবে যারা এই ভ্যাট তুলতে পারছেন না তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। দুধ বিক্রি করতে না পেরে তারা ভ্যানে করে দুধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ২০ থেকে ২৫ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করছেন। এতে তাদের গো-খাদ্যের দামই উঠছে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আশির দশক থেকে পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ অঞ্চল গড়ে উঠেছে। শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ এলাকায় প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি গো-খামার রয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি কৃষক তাদের বাসগৃহে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী লালন পালন করেন। ফলে প্রতিদিন এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ লিটার গরুর দুধ উৎপাদিত হয়।

প্রচুর দুধ উৎপাদন হওয়ায় এ এলাকা থেকে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ ডেইরি, ফার্মফ্রেস, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরি, ব্র্যাকসহ প্রায় ২০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারাদেশে বাজারজাত করে। এ সব প্রতিষ্ঠানের দুধ সংগ্রহের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ লিটার। বাকি দুধ স্থানীয় ঘোষ বা দুধ ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুধসহ ঘি ও ছানা তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠান। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও মিষ্টিজাত কারখানা ও চায়ের দোকানে প্রচুর দুধ প্রয়োজন হয়। খামারিরা জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে দুধের চাহিদা কমে গেছে।

লোকজন ঢাকা শহর ছাড়তে থাকায় সেখানে গত দু-তিন দিন ধরে দুধ প্রায় বিক্রিই হচ্ছে না। এছাড়া পাবনা-সিরাজগঞ্জ এলাকাতেও দুধের চাহিদা ব্যাপকহারে কমে গেছে। খামারিদের অভিযোগ, দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই খামারি ও কৃষকদের দুধ বিক্রি করার প্রধান ভরসা। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান দুধ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।

ভাঙ্গুড়াদুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার কৃষকরা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে দুধ বিক্রি করছেন। আবার অনেককে স্থানভেদে ১৫ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। দুগ্ধ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটা কারখানার ডিজিএম ডা. ইদ্রিস আলী জানান, করোনার প্রভাবে সরকারি নির্দেশে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার আবার নির্দেশ দিলে ফ্যাক্টরি চালু করা হবে।

 
Electronic Paper