১ যুগ ধরে লোহার শিকলে বন্দি আলামিনের জীবন!
এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ১২:১৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
বাড়ির উঠানেই গাছে পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই আলামিনের সারা দিনের সঙ্গী। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যা-ই হোক, হোটেলের কাজ থেকে মা-বাবা না ফেরা পর্যন্ত আলামিনকে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সন্ধ্যা বা রাতে মা-বাবা শিকলের তালা খুলে ১৭ বছর বয়সী মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ঘরে ফেরেন।
শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের শান্তিপুর মহল্লার হোটেল শ্রমিক শহিদুল ইসলাম ও রেখা খাতুনের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে আলামিন হোসেন (১৭)। প্রায় ১ যুগ ধরে লোহার শিকলে বন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে।
প্রতিবন্ধী আলামিনের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, যে সময়ে তার বই-খাতা নিয়ে স্কুল ও মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা। ঠিক সেই বয়সে তাকে শিকলবন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমি হতদরিদ্র মানুষ, দিন আনি দিন খাই। তাই ছেলের উন্নত চিকিৎসা তো দূরে থাক ভালোমতো দু-বেলা খেতেই দিতে পারি না। পিতা হয়ে এটা সহ্য করা খুবই কঠিন।
আলামিনের মা রেখা খাতুন বলেন, জন্মের দুই বছর পর আমরা বুঝতে পারি ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে চোখে চোখে রাখা সম্ভব হলেও এরপর থেকে তা সম্ভব হয় না। সবার অজান্তে বাড়ি থেকে সে বাইরে চলে গিয়ে হারিয়ে যায়। অনেক সময় বাড়ির পাশের করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাই বাধ্য হয়ে নিজ সন্তানকে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে যাই। সারা দিন সে অভুক্ত অবস্থায় শিকলবন্দি থাকে। মূলত হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে সারা দিন তাকে এভাবে শিকলবন্দি করে রাখতে হয়। এ অবস্থায় রোদ-বৃষ্টি তার শরীরের ওপর দিয়েই বয়ে যায়। ৫ বছর বয়স থেকে এভাবেই চলছে আমার ছেলের জীবন।
রেখা আরো বলেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গনে স্বামীর বাড়িঘর নদীতে চলে যায়। তাই বাবার বাড়ির এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। নিজের কোন বাড়ি-ঘর নাই। অন্যের জমিতে মাসে ৫০০ টাকা ভাড়ায় একটি ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বাস করছি।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর পৌর সভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. লিয়াকত আলী বলেন, কার্ড পেতে কিছু সরকারি নিয়ম রয়েছে। যা পালনের জন্য ওই প্রতিবন্ধীর মা-বাবাকে বলা হলেও তারা এখনও তা করতে না পারায় তাকে কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। এগুলো পূরণ হলেই কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, খোঁজ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আলামিনের সুচিকিৎসা ও প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।