ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজশাহী নগর আ.লীগে ক্লিন ইমেজ প্রত্যাশা

মহানগর প্রতিনিধি, রাজশাহী
🕐 ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০

আগামী ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী আওয়ামী লীগের সম্মেলন। স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা। তারা চাইছেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক পদে আগামীতে যিনিই আসুক তিনি যেন সৎ ও ক্লিন ইমেজের হন। একইসঙ্গে দল ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যেন সদ্ভাব থাকে। কোনো বিতর্কিত নেতা যেন গুরুত্বপূর্ণ এ পদে না আসতে পারেন। তবে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প কাউকে আপাতত ভাবছেন না তারা।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে তোড়জোড়। সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে ১২ জন নেতাকর্মী ইতোমধ্যে তাদের নাম ঘোষণা করেছেন। পদ প্রত্যাশীদের অনেকেই অবস্থান করছেন ঢাকায়। পদ পেতে চলছে দৌড়ঝাঁপ। নিজ নিজ শক্তি ও বলয়ে চলছে লবিং।

স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে বিতর্কিত কাউকে যেন এ পদে আনা না হয়। বিশেষ করে দলের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল রাখতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নেতা নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঘোষণার পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

নগর আওয়ামী লীগের বোয়ালিয়া থানার এক নেতা বলেন, দলের মধ্যে যে ধরনের প্রোপাগান্ডা ও বিশৃঙ্খলা দেখছি তা শুভ নয়। তাই আগামী সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতা আসা উচিত। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কামারুজ্জামান বলেন, আমরা তৃণমূলের নেতা হিসেবে প্রত্যাশা করি কর্মঠ, সৎ, শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নের উপযোগী প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী একজনকে। এই নেতা যেন মানুষের কর্মসংস্থানের পথ দেখাতে পারে।

ইতোমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে অনেক নেতার নামই শোনা যাচ্ছে। যাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বিতর্কিত। এই দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি নওশের আলী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা ও মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু ও আসলাম সরকার। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক হতে চান রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবু।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের রুবন। এদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নওশের আলী বলেন, আমি মনে করি আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে যিনিই আসুন তিনি যেন স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতা হন। দল যদি আমাকে সেই রকম মনে করে দায়িত্ব দেয় তবে সেই দায়িত্ব আমি পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। তবে শেষ পর্যন্ত নেত্রীর নির্দেশনাই আমাদের কাছে শিরোধার্য। কেউ যেন পদের জন্য রাজনীতি না করেন সেটাই আমাদের কাম্য হওয়া উচিত। আর সম্পাদক পদের জন্য সবাই যেভাবে হুড়োহুড়ি করছেন- সেটা ঠিক না। বিশেষ করে কাউন্সিল অধিবেশনের আগে এভাবে পদের জন্য লোভী হয়ে ওঠা দলের জন্য ক্ষতিকর।

আরেক প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি। আগামীতেও দলের জন্য কাজ করতে চাই। সেই জায়গা থেকে দল যদি মনে করে আমি সম্পাদক পদের জন্য যোগ্য তাহলে সেই দায়িত্ব আমি যথাযথ পালন করব। আর যদি দল মনে না করে তবে যাকেই সে পদের জন্য যোগ্য মনে করবে তার নেতৃত্ব মেনেই কাজ করতে চাই। আমার কাছে দল আগে তারপরে পদ।

বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আজিজুল আলম বেন্টুও বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। আমার এক ভাই শহীদ হয়েছেন। তাই রাজনীতির সঙ্গেই থাকতে চাই সবসময়। রাজনীতিকে ভালোবেসে তা ভালোভাবে করতে চাই। সেখান থেকে দল যদি মনে করে আমি সম্পাদক পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সেই দায়িত্ব নিয়ে আমি যথাযথ পালন করতে চাই।

তবে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আমি দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে এসেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এই মেয়াদেও আমি সাধারণ সম্পাদক পদেই থাকছি। আমি এখন সেই অনুযায়ী কাজ করছি। এখন আমার কাজ সম্মেলন সফল করা। বড় পরিসরে সুন্দর আয়োজনে সম্মেলন সফল করা। সম্মেলন সফল করতেই কাজ করছি। অবশ্য তার ভাষায় অনেক বিতর্কিত নেতা সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হওয়ায় তিনি বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এবারের কমিটি হবে বিতর্কিত ব্যক্তিমুক্ত। কমিটির কোনো পদে যাতে কোনো বিতর্কিত নেতা না থাকে সেই চেষ্টাই থাকবে। স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব যেন পদে আসেন, দলের সভানেত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা সেটাই।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ওই কাউন্সিলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সভাপতি ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচটি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো নতুনভাবে না হওয়ায় ২০১৪ সালের করা ৩৯৫ জন কাউন্সিলর দিয়েই এবারেও মহানগর কমিটির সম্মেলন হবে।

 
Electronic Paper