ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেতনের টাকা বাঁচিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা

হ্যাপি মাহমুদ
🕐 ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দোগাছী গ্রামের মো. শেফালি খাতুন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা শুরু করেছেন। তিনি পেশায় একজন সহকারী শিক্ষিকা। মেরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করে যে বেতন পান তার থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা শুরু করেছেন।

 

গত দুই মাস যাবৎ শুধু ডাইভারের একবেলা খাবারের বিনিময়ে এলাকাবাসীকে এ সেবা দিয়ে আসছেন তিনি।

সেবা পাওয়া আটটি গ্রামের মধ্যে রয়েছে- বড়াইগ্রাম উপজেলার দোগাছীসহ মশিন্দা, দিঙ্গলকান্দী ,লক্ষীচামারী, মনপিরিত, মেরীগাছা, চুলকাটিয়া ও কুজাইল। এ পর্যন্ত আট গ্রামের ৪৫ জন রোগী এ সেবা নিয়েছে। এ ছাড়া লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজেও অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া লিমন বলেন, যিনি এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করেছেন তিনি আমার পরিচিত। সেবাটি এলাকার গরিব অসহায় মানুষদের জন্যে একদম ফ্রি। সেবাটি চব্বিশ ঘন্টাই চালু রয়েছে এলাকার মানুষদের জন‍্য এবং এতে মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছে। সহকারী শিক্ষিকা মোছা. শেফালি খাতুনের গ্রামের মানুষ হিসেবে খুবই গর্ববোধ করি। আমাদের সবার উচিত তার মতো সেবামূলক কাজ করা।

সেবাগ্রহীতা নাসির উদ্দিন বলেন, এ সেবা পেয়ে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। হয়তো সেইদিন আমি মারাই যেতাম যদি দোগাছী গ্রামের ওই অ্যাম্বুলেন্স না আসতো। অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেয়ে আমার অনেক উপকার হয়েছে।

এ সেবার প্রশংসা করে স্থানীয় মেম্বার জমিন বলেন, গরিব-দুঃখী মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে। যেখানে এলাকার গরিব মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহন করাই কঠিন, সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বিলাসিতা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের শেফালী ম্যাডামের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

মোছা. শেফালী খাতুন বলেন, দরিদ্র মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যেই এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করি। অনেক ছোট বয়স থেকেই আমি মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা নিয়ে শিক্ষা অর্জন করেছি। গ্রামের দরিদ্র মানুষ অনেক সময় টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া যদি বেঁচে যায় তাহলে তারা একটু ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে।

এ ছাড়াও শেফালি খাতুন শিক্ষকতার পাশাপাশি এলাকার মানুষকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার করে থাকেন। সেমিনারে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ, শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এসব সেমিনারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে শিক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে শেফালী খাতুন বলেন, আমার একটা অ্যাম্বুলেন্স থাকার কারণে অনেক সময় এই আট গ্রামের বাইরে মানুষের ফোন পাওয়ার পরও সেবা দিতে পারছি না। অদূর ভবিষ্যতে তিনি এ সেবা বাড়াতে চান। কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সেবা প্রাপ্তির পরিধি বাড়ানো তার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, আমার কাছে সেবাই ধর্ম, আমি এ ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে পেরে খুব খুশি। যদি সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি কোনো দাতাগোষ্ঠী আমার পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এই সেবার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব।

 
Electronic Paper