ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফসলের মাঠে প্রভাবশালীদের পুকুর

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৮

আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও মাঠের পর মাঠ ছিল সবুজে ঘেরা। ভূমিহীনরা তখন কিছু জমি লিজ নিয়ে ফসল উৎপাদন করতেন। এখন আর মাঠভরা সবুজ ফসল দেখা যায় না। বদলে গেছে মাঠের চিত্র। বাধ্য হয়ে কৃষকের পেশা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

দরিদ্র ভূমিহীনরা চালাচ্ছেন ভ্যান-রিকশা। আর প্রান্তিক কৃষকদের পাঁচ বছর আগের ফসলি জমি এখন এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে। সেসব জমিতে আর চাষাবাদ হয় না। আপাত দৃষ্টিতে যতদূর চোখ যায় মাটির উঁচু উঁচু পাড়। এসব পাড় ঘেরা একটার পর একটা পুকুর। অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় শুধু যে কৃষকের ফসলি জমি হারাতে হচ্ছে তা নয়। সরকারি খাস খতিয়ানের জমিও রেহাই পাচ্ছে না। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে পুকুরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজারে যার বেশিরভাগ পুকুর খনন করা হয়েছে চাপিলা ইউনিয়নজুড়ে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রায় ৫ হাজার পুকুর রয়েছে শুধু ওই ইউনিয়নেই।
চাপিলা চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ভুট্ট বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। পানি বের হওয়ার সুযোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে গ্রামের পাকা সড়ক, মেঠোপথ এমনকি ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ জন-জীবনে।
গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পুকুর শুধু যে জনজীবন বিষিয়ে তুলছে তা নয়। পুকুরের কারণে মারাত্মক ফসলহানির ঘটনা ঘটছে। বিগত পাঁচ বছরে গুরুদাসপুর উপজেলার বিলগুলোর প্রায় সাড়ে নয়শ হেক্টর ফসলি জমি কমেছে।
পুকুরের সঠিক হিসাব নেই, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের চলতি বছরের জরিপ অনুযায়ী গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে বেসরকারি পুকুরের হিসাব দেওয়া হয়েছে ৫৪৩৫টির। সরকারি হিসাবে রয়েছে ৩২টি। উপজেলা মৎস্য অফিসের চালানো ২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, সে সময় উপজেলায় বেসরকারি পুকুরের সংখ্যা ছিল ৪৬৪৯টি। এসব পুকুরের জলায়তন ছিল ৯৩৬৭ হেক্টর জমি। এ জরিপের পর ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের শুরুর দিকে ৮৬টি পুকুর নতুন করে খনন করা হয়েছে। এরপর যে পুকুর খনন করা হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি আর ব্যক্তি মালিকানা মিলে পুকুর খনন করা হয়েছে শত শত হেক্টর জমিতে। উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের রানীগ্রাম, হাঁসমারী বিলে দেখা গেছে সরকারের খাস জমি দখল করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পৌর সদরের দক্ষিণ নারিবাড়ি বিলে পানি চলাচলের কালভার্ট বন্ধ করে পুকুর খনন চলছে। ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু উচ্চ বিদ্যালয় ঘেঁষে পুকুর খনন করা হয়েছে। চাঁপিলা ইউনিয়নের সড়কগুলো ডুবে গেছে। জলাবদ্ধ রয়েছে শত শত বিঘা জমি।

 
Electronic Paper