ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রত্নগর্ভার সংগ্রামী জীবন

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী)
🕐 ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯

রেনুজা বেগম (৬০) এক সংগ্রামী মা। তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। যে সংগ্রামের শুরু তার শৈশব থেকে। সবকিছু ছাপিয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি একজন রত্নগর্ভা।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত পাঁচ সন্তানের এ জননী নিজে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অল্প শিক্ষিত হলেও প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষার পরিপূর্ণ আলোয় আলোকিত করে তুলেছেন। যারা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। শুধু তাই নয়; অন্যদের কাছেও যেন আলোর দিশারী রেনুজা।

আপন আলোয় উদ্ভাসিত এ মা তার দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস ও সতাতার কারণে দি ইঞ্জিনিয়ার্স-রত্নগর্ভা মা ২০১৯ সম্মাননা পদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনায় আইইবি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে রত্নগর্ভা এ মায়ের হাতে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

তার চার ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে প্রথম ছেলে মোহাম্মদ শরিখুল ইসলাম বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কর্মরত। দ্বিতীয় ছেলে ডা. শাহীনুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার। তৃতীয় ছেলে ডা. এস এম আজহারুল ইসলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার। চতুর্থ ছেলে এস এম মাজহারুল ইসলাম রুবেল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। তার একমাত্র মেয়ে ফাহমিদা আফরোজ তমা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন।

অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন মা রেনুজা বেগম। পড়াশোনার প্রতি ছিল অগাধ আগ্রহ। তবে তার পড়াশোনায় ছিল নিষেধাজ্ঞা। তাই লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে তিনি বই পড়তেন। কিন্তু এ মেধাবী নারীর পড়াশোনার ইতি ঘটে পঞ্চম শ্রেণিতেই। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার ধর্মীয় পশ্চাৎপদতার কারণে আর এগোয়নি তার লেখাপড়া।

ছেলে শরীফুল ইসলাম বলেন, আমার মা আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু, কড়া প্রশাসক। অনেক ব্যক্তিত্ত্ব সম্পন্ন একজন নারী। পড়াশোনার বিষয়ে মা কখনও আমাদের কোনো ছাড় দিতেন না। পড়ার কারণে মায়ের কাছে মার খেয়েছি অনেক।

রেনুজার একমাত্র মেয়ে ফাহমিদা আফরোজ তমা বলেন, আমার মা মানুষ গড়ার কারিগর। মা ছিলেন সুশাসন, শিক্ষা ও নিয়মানুবর্তিতায় কঠোর। এভাবেই আমার মা আমাদের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছেন।

 
Electronic Paper