ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বদলগাছী আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮

নওগাঁর বদলগাছীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার দুটি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন পরিবারের জন্য ১০০টি আধাপাকা ঘর বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে মথুরাপুর ইউনিয়নে ৯৯টি ও আধাইপুর ইউনিয়নে একটি ঘর। প্রতিটি ঘর ও টয়লেটসহ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে গত তিন মাস থেকে এসব ঘর নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।
সুবিধাভোগীরা জানান, ঘর বরাদ্দ থেকে শুরু করে তৈরিতে চলছে নানা অনিয়ম। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে পিলার তৈরি করা হয়েছে। ঘর নির্মাণ শেষ না হতেই জানালা, দরজার কাঠে ফাটল দেখা দিয়েছে। যাদের জমি আছে ঘর নাই, সেসব অসহায় ব্যক্তির ঘর পাওয়ার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে সচ্ছলদের। যারা চাহিদা মতো টাকা দিতে পারেননি, তারা ঘর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
আবার সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫-১০ হাজার টাকা। এসব অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালাম আজাদ ও পরিমল মণ্ডল এবং শেখ ফরিদ পিন্টু নামে এক ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
শ্যামপুর গ্রামের শুকলাল বলেন, ‘আগে পাটকাঠির বেড়ার ঘরে থাকতাম। এখন সরকার থেকে পাওয়া ঘরে থাকছি। তবে ঘর নিতে মথুরাপুর ইউনিয়নের মেম্বার পরিমল মণ্ডল ও শেখ ফরিদ পিন্টু পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া টিন, ইট, বালু, সিমেন্ট, পিলার ও রিং নিয়ে আসতে প্রায় দেড় হাজার দিতে হয়েছে। আর টাকা না দিলে ঘর পাব না। এজন্য টাকা দিয়েছি।’
লক্ষ্মীকুল গ্রামের জিল্লুর রহমানে স্ত্রী রোজিফা বলেন, ‘ঘরের পিলার নিয়ে আসতে ৯৫০ টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া টয়লেটের রিং নিয়ে আসতে আরও ২০০ টাকা লাগবে এবং ছয়জন মিস্ত্রীকে দুই বেলা করে চারদিন খাবার দিতে হয়েছে। যেখানে আমার ঘরটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে বন্যায় ডুবে যায়। আমরা নিজেরা মাটি ফেলে সেখানে উঁচু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। সামনে বন্যায় ঘর ডুবে যাবে। এখন ঘর ভেঙে তো আর তৈরি করার সাধ্য আমার নেই। এজন্য মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘর তৈরির সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘর করতে গেলে প্রায় এক লাখ চার হাজার টাকার মতো লাগবে। আর ঘরপ্রতি যে এক লাখ টাকা বরাদ্দ তা কোনোভাবেই করা সম্ভব না। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও এ রকম কাজ করা হয়নি। শতভাগ কাজ ভালো এবং বিধি মোতাবেক হচ্ছে। কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।’
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্পের সভাপতি মাসুম আলী বেগ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামীতে উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতে বরাদ্দ সাপেক্ষে ঘর তৈরি করা হবে। তবে ঘর তৈরিতে যদি কমিটির কেউ জড়িত থাকে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 
Electronic Paper