ভরা মৌসুমেও ধানের অভাব
ঈশ্বরদীর অধিকাংশ চালকল বন্ধ
সেলিম আহমেদ, ঈশ্বরদী (পাবনা)
🕐 ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০১৮
ধানের বাজারে অস্থিরতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বেশিরভাগ চালকল। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে ৬৫০টি চালকলের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ৮০টি। ধান সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরেই সংকটে পড়েছে চালকলগুলোর উৎপাদন।
একদিকে বেড়েছে চালের দাম, কমেছে বেচাকেনা। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। অপরদিকে বাজারে অস্থিরতায় বেশিরভাগ চালকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভোক্তাদের ওপর।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চাল নিয়ে কথা চালাচালিতে যখন সারা দেশ সরগরম, ঠিক সে সময়ে অনেকটাই নিস্তব্ধ ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর চালের মোকাম। মোটা চাল সরবরাহকারী দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মোকাম এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। দফায় দফায় চালের মূল্যবৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে সংকট। গত এক মাসে ঈশ্বরদীতে প্রকারভেদে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা। নজিরবিহীন এ মূল্যবৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
উপজেলা ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, মিনিকেট, বিআর-২৮, বিআর-২৯, পারিজা, নতুন গুটি স্বর্ণা, বিনা-৭ ও বিআর-৩৯ চালসহ উৎপাদিত সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
স্থানীয় এক কৃষি শ্রমিক বলেন, ‘কামলা খাইটে যে কয় টেকা পাই তাতে চাল কিনতিই টেকা শেষ হয়া যায়। এবা কইরে কয়দিন চলবো। সরকার এক টেকা দাম বাড়ালি, মিল মালিক বা ব্যবসায়ীরা বাড়ায় দশ টেকা। কিন্তু দাম কুমার সময় আর দশ টেকা কমে না। দশ টেকা দাম বাড়ায়া, এক-দুই টেকা দাম কমালি কি হিসাব মেলে। যা কষ্ট সব ওই আমাগোরে কামলা মানুষের। বড়লোকের তো কোনো সমস্যা নাই।’
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খায়রুল ইসলাম জানান, ঈশ্বরদীর মোকামে ছোট-বড় মিলিয়ে চালকলের সংখ্যা ৬৫০টি। অথচ ধান সংটের কারণে এ মৌসুমে সচল রয়েছে মাত্র ৮০টি। সরকারি গুদামে যে আপৎকালীন মজুদ সেটার অবস্থা খুবই নাজুক। আর সেই সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা মিল মালিক।
ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম জানান, এখন ধান কিনে চাল তৈরির পর তা বিক্রি করতে গেলে লাভের বদলে ট্রাকপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ধান সংকট তো আছেই। যে কারণে চালের মোকামে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চালকল মালিকরা জানান, মোকামে ক্রেতাশূন্য অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চালু চালকলগুলোতে যা চাল উৎপাদন হচ্ছে, তাও বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে। ক্রেতার অভাবে বেশিরভাগ চালই অবিক্রীত পড়ে থাকছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মোল্লা জানান, বাজারে ধানের দামের সঙ্গে চালের বাজার মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় ঈশ্বরদীর মোকামে উৎপাদিত চালের মূল্য বাড়ছে। মোকামের মিলগুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন চালের আড়তে থাকা চালগুলো বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।