ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সমাবর্তন পুনশ্চ

তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ৯:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৮

সমাবর্তনে অংশ নেওয়াটা আমার জন্য ছিল অনেকটা বিলাসিতার নামান্তর। কেননা কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করার প্রক্রিয়াটি মোটেও সহজ ছিল না। তারপরও গত ৫ অক্টোবর সমাবর্তন মহড়াসহ ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাটা আমার সারাজীবনের জন্য এক অনন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

মহড়ার দিন অনেক ক্লাসমেটের সাথেই দেখা হয়েছিল। ক্লাসের যে ছেলে বা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার সাথেও এদিন হাসি আর আন্তরিকতামাখা কণ্ঠে আবারও কথা হওয়ার এ উপলক্ষটা বোধহয় সমাবর্তন না এলে পাওয়াই যেতো না। ৩ অক্টোবর যখন সমাবর্তনের গাউন সংগ্রহ করছিলাম, তখন ক্লাসের সবাই একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় খুব করে ইচ্ছে করছিল আবারও ক্লাসের দিনগুলোতে ফিরে যেতে।
গাউন পরে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো এ ৩/৪ দিন আমাদের আবারও সে মধুর অতীতে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যক্তিগত মোবাইলসহ পরিচিত কারও ডিএসএলআর এর সুবাদে ছবিতো তোলা হচ্ছিলই, তারপরও এ গৌরবের সময়টিকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার জন্য সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে আমাদের ব্যাচের পক্ষ থেকে একজন ক্যামেরাম্যান ঠিক করা হয়েছিল। এ কয়েকদিনে গাউন পরে অগণিত ছবি তোলা হয়েছে। দফায় দফায় ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েও শেয়ার করা শেষ হয় নি। তাছাড়া সব ছবি তো আর ফেসবুকে শেয়ার করাও যায় না। তাই কিছু ছবি নিজের সংগ্রহেই সযত্নে থেকে গেছে।
সমাবর্তনে ক্লাসের সবাইকে একসঙ্গে দেখতে পাবো এটা আশা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। অনেকেই একা একা নিজেদের ক্লোজড ফ্রেন্ডদের সঙ্গেই ছবি তুলে সময় কাটিয়েছে। আসলে প্রথাগত একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ক্লাসের সবাইকে যে একসঙ্গে আর পাওয়া সম্ভব হবে না, এ বাস্তবতা সমাবর্তনের সময় বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাও মহড়ার দিন অনেকের সঙ্গে দেখা হলেও সমাবর্তনের দিন আর দেখা হয়নি।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হয়েছিল। সমাবর্তনের মূল প্যান্ডেলে প্রবেশ করার সময় যে ভীড়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম, তাতে একজন বাদে সব বন্ধুকেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।
সমাবর্তন স্থলে মোবাইল, ব্যাগ, ঘড়ি, পানির বোতল, চাবির রিং নেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এসব কোথায় রাখবো সেটা নিয়ে ছোটখাটো টেনশনও কাজ করছিল। আগের দিন ফোন করে আগের বার সমাবর্তনে অংশ নেওয়া বন্ধুর কাছ থেকে অভিজ্ঞতা জানলাম। তাছাড়া ফেসবুকেও আমাদের ক্লাসের গ্রুপে পোষ্ট দেওয়া হয়েছিল একটি ব্যাগে করে এসব জিনিস কারও হলের রুমে রেখে যাওয়া হবে। কিন্তু সমাবর্তনের দিন সবাই ডিপার্টমেন্টের সামনে এক হওয়ার পর দেখা গেল ছবি তোলার ব্যস্ততায় কারও যেন সময়ই নেই হলে জিনিসগুলো রেখে আসার। পরে আমাদের এক বন্ধুর গাড়িতে মোবাইলসহ ব্যাগগুলো রেখে আমরা সমাবর্তনে গিয়েছিলাম।
তিন দফা দেহ তল্লাশির পর আমরা সমাবর্তনের প্যান্ডেলে প্রবেশ করলাম। সমাবর্তনের শুরুতেই যখন জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল, তখন এক অভূতপূর্ব শিহরণে নিদারুণ গর্ব অনুভূত হচ্ছিল। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার গৌরবদীপ্ত অনুভূতি ভেতর খেকেই উপলব্ধি করছিলাম। পুরো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সত্যি বলতে কি প্রথাগত বক্তৃতা শুনে বোরিং ফিল করতে করতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়েও পরেছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা আমাদের সবাইকেই জাগিয়ে রেখেছিল। তার বক্তৃতার হিউমার সেন্স নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বললেও আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে তার পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যই আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ রাষ্ট্রপতির দৃপ্ত কণ্ঠে বলা ছাত্রদের হাত ধরেই দেশের রাজনীতি চলবে এবং ফেসবুক আক্রান্ত প্রজন্মকে বাস্তব জীবনে মনোযোগী করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে, এ কথাগুলো আমাদের দারুণ ভাবে উজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল, তিনি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এভাবে কথা বলেন। যা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক বড় পাওয়া।
আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের সনদ প্রদান করলেন, তা অনেক গর্বের বিষয় ছিল। প্রোগ্রাম শেষে গাউন জমা দিয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করলাম। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ সম্মানজনক ছিল, এ কাজে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা গ্রাজুয়েটদের প্রতি যথেষ্ট আন্তুরিকতাই দেখিয়েছিলেন।
এবারের সমাবর্তনে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোর সার্টিফিকেটই তুলতে পারতাম। কিন্তু শুধুমাত্র অনার্সেরটাই তুলেছি, মাস্টার্সেরটা পরে কোনো এক সময় তুলে নিবো। সমাবর্তনের পর অনেক দিন হয়ে গেল, কিন্তু হৃদয় মনে সমাবর্তনের যে ভালো লাগার ফিলিংসটা কাজ করছে তা আসলে কোনো দিনই ভুলবার নয়। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সমাবর্তনের এ অনুভূতি সারা জীবনের জন্যই সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।

তৌফিকুল ইসলাম : সাংবাদিক
[email protected]

 
Electronic Paper