ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টুকরো কলাম

সড়কে মৃত্যু আর কত!

শিহাব উদ্দিন
🕐 ২:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২১

সড়কে মৃত্যু আর কত!

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে টেলিভিশন চালু করলে কিংবা পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক সংবাদ। এ যেন বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

 

কত শত তাজা প্রাণ প্রতিদিন ঝরে পড়ছে অকালেই। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। অথচ এ ব্যাপারে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু কিংবা রামপুরা বাজারের কাছে সড়ক পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহতের ঘটনা দাগ কেটেছে সচেতন মানুষের মনে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধে কয়েকদিন কর্তৃপক্ষের ফাঁকা বুলি কিংবা মিথ্যা আশ্বাসের পর হয়তো আবার একই অবস্থায় ফিরে আসবে পরিস্থিতি। কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তার আহাজারির শেষ হবে না। হয়তো সেই আহাজারি উপর মহলের কানেও পৌঁছাবে না। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই স্বজনের আহাজারিতে ফেটে পড়বে বাংলার আকাশ বাতাস। লাশের মিছিলে ছেয়ে যাবে আমাদের এ নগরী।

বলা বাহুল্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। উন্নত হচ্ছে সভ্যতা। সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু সে হিসাবে বাড়ছে না রাস্তার সংখ্যা। পুরাতন রাস্তাঘাট কোনো রকমে দায়সারা সংস্কার করে চলছে হাজারো ভারি ভারি যানবাহন। ফলে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিগত কয়েক বছরে বেড়েই চলেছে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা।

কোনোভাবেই যেন থামানো যাচ্ছে না সড়কে প্রাণহানি। গত বছর করোনার কারণে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। সে হিসেবে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল একেবারে নগণ্য। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। রোডটি সেফটি ফাউন্ডেশনের ‘সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’ এর দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০ সালে দেশে পৃথক চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৪৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ছয় বছরে সড়ক দুর্ঘনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬৪ জনের মৃত্যু ঘটছে এবং আরও ১৫০ জনের অধিক আহত হচ্ছেন।

এসেছে শীতকাল। এসময় ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় রাস্তাঘাট। ফলে চালকরা সামনের গাড়ি স্পষ্ট দেখতে পান না। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায় বহুগুণে। পাশাপাশি মহাসড়কে উন্নতমানের আলোর ব্যবস্থা করাও আবশ্যক। দিন দিন বেড়েই চলেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যাও। এক হিসাব মতে, গত বছরে এক হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রায় এক হাজার ৪৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এসব দুর্ঘটনার পেছনে বড় কারণ হলো আমাদের অসচেতনতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মোটরসাইকেলে আরোহীর সংখ্যা দুই-তিন জন কিংবা তারও অধিক। এতে ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

এছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেলমেট ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা ইত্যাদি দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। আবার অনেকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্সও। আবেগে পড়ে লাগামহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে ডেকে আনছে মৃত্যুর মতো ঘোরতর বিপদ। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মূলত দায়ী অদক্ষ চালক, রাস্তায় যানবাহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ট্রাফিক আইন না মানা, ফুটওভার রাস্তা ব্যবহারে অনীহা ও ভঙ্গুর রাস্তা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে এখনই নিতে হবে আশু পদক্ষেপ।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ইতোমধ্যে সরকার যেসকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। তবে শুধু এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। এ লক্ষ্যে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, লাইসেন্স প্রদানে চালকের দক্ষতা যাচাই, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি পরিহার করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করা, রাস্তার পাশের অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার উঠিয়ে দেওয়া ও নিরাপদ সড়ক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

 
Electronic Paper