ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ওমিক্রন ও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি

রূপম চক্রবর্ত্তী
🕐 ২:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২১

ওমিক্রন ও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি

দেশে এখন যেভাবে জনসমাগম হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাতে সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়, যদি আমরা আগের মতোই সবকিছু করি তাহলে সংক্রমণ অবশ্যই বেড়ে যাবে। বিভিন্ন সমাবেশে লোকসমাগম সীমিত আকারে করা দরকার। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ শ্রেণিভুক্ত করেছে। মধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরায়েলে শনাক্ত হয়েছে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বলা হচ্ছে, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর এই ভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি।

কোয়াজুলু-নাটাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফর্মের পরিচালক তুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ‘মিউটেশনের ধারা খুবই অস্বাভাবিক’, যার মধ্যে ৩০ এরও বেশিবার মিউটেশন হয়েছে কেবল স্পাইক প্রোটিনেই। সব ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ বদলায়। তবে বেশিরভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেই ভাইরাসটি যে দেহে আশ্রয় নেয় তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না, বা ফেললেও তা এত সামান্য যে টেরই পাওয়া যায় না। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের যাত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেরও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছে পরামর্শক কমিটি।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণ সতর্কতা জারির পাশাপাশি সব ধরনের সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এটি গবেষণা পর্যায়ে থাকায় এর সংক্রমণের ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকটাই অজানা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ দেখা যায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে উদ্বেগজনক বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বতসোয়ানায় টিকাগ্রহীতারাও এ ধরন দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যালোচনায় ভ্যারিয়েন্টটি গৌতেংয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং সম্ভবত এখন দেশের অন্য ৮টি প্রদেশেও পৌঁছে গেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এরই মধ্যে হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরাইলসহ বেশ কয়েকটি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এ ধরন নিয়ে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। গত ১৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের করোনার নতুন ধরনের ব্যাপারে প্রথম সতর্ক করে দেন অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি। ওই সময় তিনি ৩০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৭ জনের শরীরে অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখতে পান তিনি। যা করোনার অন্যান্য ধরনগুলোর উপসর্গের চেয়ে ভিন্ন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটার সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়ায়। নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজের অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা তথা মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি গণমাধ্যম ভূমিকা রাখতে পারে। রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো ‘আসুন আমরা মাস্ক পরি’ স্লোগান চালু করতে পারে। যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা কিংবা বাড়তি সতর্কতার চেষ্টা করি। এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও রয়েছে।

রূপম চক্রবর্ত্তী : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

 

 
Electronic Paper