ভাড়া তো বাড়ল, কিন্তু যাত্রীসেবা!
লাইজু আক্তার
🕐 ১:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২১
৩ নভেম্বর রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ অর্থাৎ লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাজারে এর প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সব পরিবহন মালিক এরই সুযোগ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই শুরু করে দিল ধর্মঘট। টানা তিন দিন গণপরিবহন বন্ধ। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ ২৩ শতাংশ বর্ধিত জ্বালানির বিপরীতে বাসভাড়া বাড়িয়ে দেয় ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ। যা আমাদের মতো গণপরিবহনে যাতায়াতকারী লোকগুলোর ওপর এক প্রকার অনিয়ম। পরিবহন মালিক ধর্মঘট করে তাদের দাবি মিটিয়ে নিল। এদিক দিয়ে যেন গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের নিয়ে কোনো ভাবনাই নেই সরকার কর্তৃপক্ষের। শহরে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাজের শেষে ঘরে ফেরার একমাত্র পরিবহন গণপরিবহন। জ্বালানির দামে একটু এদিক-ওদিক হলেই বেড়ে যায় যাত্রী ভাড়া। কিন্তু পরিসেবা! যাত্রীদের পরিসেবা নিয়ে অনেক অনিয়ম দেখা যায় গণপরিবহনগুলোতে।
শহরগুলোতে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করে। গাড়িগুলোর পরিবেশের দিকে তাকালে দেখা যায় রঙচটা, এখানে ওখানে ভাঙ্গা, সিটের কাপড় ছিঁড়ে গেছে, গাড়ি ঠিকমতো ধৌত করে না, জানালার গ্লাস ভাঙা, সিটের কাপড়ে ময়লা লেগে আছে, ফ্যান থাকলেও নষ্ট আর দুর্গন্ধে ভরা, ঠিকমতো স্প্রেও করে না। এগুলোর কি কোনো পরিবর্তন হবে না? ঠিকই তো যাত্রী ভাড়ার পরিবর্তন হয় যখন তখন তাহলে গণপরিবহনগুলোর পরিবেশের পরিবর্তন হয় না কেন?
শহরে এমন কোনো গণপরিবহন দেখা যাবে না, যাদের গাড়ির পরিবেশ ঠিকঠাক আছে। আমজনতা নিরুপায় হয়ে এরকম পরিবেশেই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে কারণ তাদের প্রাইভেট গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। একদিকে গাড়ির পরিবেশ এরকম জঘন্য অন্যদিকে সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিংবাজি। সিটিং সার্ভিস তো নয় যেন চিটিং সার্ভিস। যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো নামানো করে, যাত্রী চলাচলের রাস্তা থেকে শুরু করে গেট পর্যন্ত থাকে লোকের সমাগম। কোনো রকমে ঝুলিয়ে নিচ্ছে লোক অথচ বলছে সিটিং সার্ভিস। এরকম পরিবেশকে চিটিং সার্ভিস বললে ভুল হবে? এগুলো নিয়ে কি কারও মাথাব্যথা নেই?
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেখা যায়, পরিবহন মালিকরা অতি মুনাফার লোভে নিজেরাই সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। লোকাল, সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নামে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য চালাচ্ছে মালিক-শ্রমিকরা। কেন এরকম নৈরাজ্য আমাদের মতো খেটে খাওয়া আমজনতার ওপর? এছাড়া অভিযোগও রয়েছে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা শহরের পুরো পরিবহনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। পরিবহন সেক্টরে ভয়াবহ সিন্ডিকেট থাকায় সরকারও সেখানে অসহায়। এটা কি সত্যিই সরকারের অসহায়তা? সরকারের উপরেও পরিবহন সেক্টর! সত্যিই অকল্পনীয়, ভাবা যায় না।
এসব অনিয়ম আর চিটিংবাজি কতদিন চলবে? এর ফয়সালা হওয়া জরুরি। শুধু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কথা নয় এবার আমজনতার কথা ভাবার জন্য সরকার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ভাড়া বাড়ল এবার পরিবহনগুলো সেবার মানও বাড়ুক। গণপরিবহনে সংস্কার নয়, আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। পুরনো নিয়মে আর চলার কোনো অবস্থা নেই। সময়, অর্থ এবং সর্বসাধারণের নিরাপত্তার বিবেচনাকে সামনে রেখে গণপরিবহনে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে সকলে আন্তরিক হবেন এবং কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে এটাই কাম্য।
লাইজু আক্তার, শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ