র্যাগ ডে’র নামে যথেচ্ছাচার
আসাদ বিন সফিক
🕐 ১:৪০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২১
প্রতি বছরই নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ‘বিদায় অনুষ্ঠান’ নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। বিশেষ করে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক শিক্ষার্থীরা। এই তিন ধাপে শিক্ষার্থীরা বিদায় নিতে হয় বেশি। শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলা শিক্ষকরা হলরুমে মোটিভেশনাল বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট অনুভব করেন। যাদের মানুষ করার জন্য এত দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন, তারা আজ বিদায় নেবে। চলে যাবে ভিন্ন আঙিনায়।
বর্তমানে বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের চোখে অশ্রু থাকলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে নেই বললেই চলে। এর কারণ হচ্ছে, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদায়ের নামে র্যাগ ডে পালিত হয়। এর অর্থ বিশেষ দিনে হৈ- হুল্লোড় করা। বিশেষ করে সেটা শহরে বেশি প্রচলিত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেটা এখন গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও লক্ষ করা যায়। সবাই সাদা কালার গেঞ্জি পরবে এবং একেকজনে একেক ধরনের মার্কার কলম কিনে নেবে। যার যা ইচ্ছে তা গেঞ্জিতে লিখে দেবে। সবাই সবার শরীরে লিখে দেয়। সেখানে শিক্ষণীয় কিছু না লিখে, সব আবেগজনিত বিষয় লিখে দেয়।
অনেকে আবার অশ্লীল শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে। যা ইতোমধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
শরীরে রং ছিটাছিটি করে। মুখে রং ছিটাছিটি তো আনন্দের অনুষ্ঠানে করা হয়। বর্তমানের বিদায় অনুষ্ঠান দেখে মনে হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধুমধাম করে কোনো শিক্ষার্থীর বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই কি বিদায়ের মানে? দীর্ঘদিন একসঙ্গে লেখাপড়া, খেলাধুলা, আড্ডা দেওয়ার ফলে একের অপরের প্রতি যেমন ভালোবাসা জন্মেছে তেমনি ঘৃণাও জন্মেছে। ঝগড়া তো নিত্যদিনের ব্যাপার। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো শিক্ষকদের সঙ্গে নিজের অজান্তেই অসদাচরণ করেছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া শিক্ষার্জন ক্ষেত্রে সবচে বড় প্রাপ্তি। তা কতজন জানে? বিদায় অনুষ্ঠানেই একটি সুযোগ থাকে সবাই একসঙ্গে হওয়া। বিদায়ের পর থেকে সবাই একত্রে হওয়া তো দূরের কথা। কোনোদিন একে অপরের সঙ্গে দেখা নাও হতে পারে।
বিদায়ের সময় সবাই সবার কছে একটু ক্ষমা চেয়ে নেবে। তা না করে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচ-গান করা তা তো বিদায় অনুষ্ঠানের সংস্কৃতিতে পড়ে না। বরং সংস্কৃতির অপব্যবহার করা হয়। তাই আসুন, অপসংস্কৃতি রুখতে এমনতর বিদায় অনুষ্ঠানকে না বলি।
আসাদ বিন সফিক, শিক্ষার্থী, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ