ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আজ বিজয়া দশমী

অভিরাজ নাথ
🕐 ১২:৫১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২১

আজ বিজয়া দশমী

বাঙালির শারদীয় দুর্গোৎসবের অন্যতম প্রধান পর্ব হচ্ছে বিজয়া দশমী। ‘দশমী’ কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ ও মনখারাপ মিশ্রিত একটি অনুভূতি। দশমী এলেই বাঙালির মনে আসে মায়ের ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটা বছর।

সাধারণত দুর্গাপুজোর সমাপ্তি হয় দশমীর মধ্য দিয়েই। এই দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে দিনটিকে বিজয়া দশমী বলার সঠিক অর্থ আজও জানেন না অনেকেই। ‘দশমী’ কথাটির সাধারণ অর্থ খুবই সহজবোধ্য। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃগৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী। সেই কারণেই এই তিথিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয়।

তবে দশমীকে ‘বিজয়া’ বলার কারণ খুঁজলে অনেক পৌরাণিক কাহিনি পাওয়া যাবে। পুরাণের মহিষাসুর বধ কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন মা দুর্গা। তাই তাকে ‘বিজয়া’ বলা হয়। এছাড়াও শ্রীশ্রীচ-ী কাহিনি অনুসারে, দেবীর আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে।

পরে শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। তাই বিজয়া দশমী এই বিজয়াকেই চিহ্নিত করেন। উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়। তবে তার তাৎপর্য সম্পূর্ণ আলাদা।

‘দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘দশহর’ থেকে। যার অর্থ দশানন রাবণের মৃত্যু। বাল্মীকি রামায়নে বলা হয়েছে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন রাম। কথিত আছে, রাবণ বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা, ও লক্ষণ। রাবণ বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষেই যুথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে। তবে দুর্গাপুজোর শেষ দিন হিসেবে দশমী শোকের ছায়া বহন করলেও শাস্ত্রে বিষয়টিকে সেইভাবে দেখা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের একটি কাহিনি উল্লেখযোগ্য। রানী রাসমণির জামাতা মথুরবাবু একসময় আবেগপ্রবণ হয়ে দশমীর দিনেও মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন।

তখন রামকৃষ্ণদেব তাকে বোঝান, বিজয়ার অর্থ দেবীমা ও সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। তিনি আরও বলেন, মা কখনো তার সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। এতদিন মা দালানে বসে পুজো নিয়েছেন এরপর মা হৃদয়মন্দিরে বসে পুজো নেবেন। এরপরেই মথুর শান্ত হন এবং বিসর্জন হয় মা দুর্গার প্রতিমা।

অভিরাজ নাথ, শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম

 
Electronic Paper