ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জীবন যেখানে যেমন

দ্বীপ হাসান
🕐 ১:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১

জীবন যেখানে যেমন

সামনে ট্রাফিক সিগন্যাল। সেখানে আটকা পড়লে নামীদামি ব্র্যান্ডের ধেয়ে চলা গাড়িগুলো নববধূর মতো বসে থাকে। ছায়ার নিচে চোখ মুদে বসে থাকা ভিক্ষুকরা তখন ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ায়। দু’হাত দিয়ে দু’চোখ কচলাতে কচলাতে তারা দ্রুত পায়ে গাড়িগুলোর জানালার দিকে এগিয়ে যায়। হাতের ইশারায় আর আঙুলের উল্টো পিঠ দিয়ে জানালার কাচে অতি সন্তর্পণে ঠকঠক শব্দ করে। সেই শব্দের একটা সীমিত মাত্রা থাকে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এইসব ভিক্ষুকরা কতটা অসহায় আমার জানা নেই! কোনো করুণাময়ীর সামনে ভিক্ষার আশায় পেতে দেওয়ার জন্য অন্তত এদের অক্ষত আর সবল দুটো হাত থাকে। সৃষ্টিকর্তা সবার প্রতি এতটা সহায় হন না। কারও কারও প্রতি হন প্রচণ্ড রকম উদাসীন। কিংবা হতে পারে সেই উদাসীনদের প্রতিই তিনি হন সবচেয়ে বেশি যত্নবান।

ছবির মানুষটার দিকে তাকালে আমার শ্রদ্ধা হয়। বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়লে এ মহান মানুষটার দেখা মেলে। হাত না থাকা মানুষটাকে খুব সহজেই বাকি সবার থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান এই মানুষটা তার বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা এই মানুষগুলোকে আর যাই হোক কখনো পরাজিত করা যায় না। এরা জিততে না পারলেও, হার মানে না। হার মানা এদের ধাতে নেই। বাঁচার জন্য নত না হয়ে শিরদাঁড়া উঁচু করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাইবা কম কী!

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বুকে ঝুলে থাকা গামছায় একটা আস্ত পাহাড় বেঁধে দিলেও তার ভার এই মানুষটার শিরদাঁড়াকে নত করতে পারবে না। কারণ তিনি নিজেই পাহাড়ের মতো অটল।

দ্বীপ হাসান, রংপুর
[email protected]

 
Electronic Paper