শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন অভিভাবকরা কী করছেন
অপর্ণা দত্তগুপ্ত
🕐 ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও করোনাভাইরাসের মতো এক অদৃশ্য শত্রু হানা দিলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। দীর্ঘ আঠার মাস পর গত সপ্তাহে স্কুল কলেজগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে, অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে আমরা সবাই আশা রাখি। গত ২/৩ মাস ধরে বিভিন্নজন বিবৃতি দিচ্ছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সংক্রমণ কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। যখনই সংক্রমণহার এবং মৃত্যুহার কমতে লাগল প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য। অতঃপর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা বাংলাদেশে এক উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
অনেকদিন পর স্কুল কলেজগামী ছাত্র এবং তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে হঠাৎ একটা ব্যস্ততা বেড়ে গেল। অভিভাবকরা বাচ্চাদের জন্য পোশাক, ব্যাগ, জুতা, পানির বোতল নতুন করে কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছেন। বাচ্চাদের মায়েরা আবার আগের মতন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সন্তান কী খেয়ে স্কুলে যাবে? অনেকদিন পর এত সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা নিজে প্রস্তুত হয়ে সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া যেন অনেককাল পর আগের জীবনে ফিরে আসা। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে নতুনভাবে সাজিয়ে নিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলো প্রয়োগ করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো আমরা গণমাধ্যম (টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে) জানতে পেরেছি। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে আমার কৌতূহল ছিল বেশি।
প্রতিদিন টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেলে খবর দেখতাম। নিজের কাছে কিছুটা আফসোস লেগেছিল এ সময় চাকরি করতে না পেরে। আমার ফেলে আসা সহকর্মী বা প্রিয় ছাত্রদের এখন অন্যভাবে দেখতে পেতাম। গণমাধ্যমকে অনেক ধন্যবাদ জানাই বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে সারা দেশের স্কুলগুলোর ছবি তুলে ধরার জন্য। ১২ সেপ্টেম্বর আমি সকাল সাড়ে সাতটা থেকে টিভির সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা বসেছিলাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিগুলো দেখেছি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করছে এবং তাদের সে প্রতিষ্ঠানগুলো বরণ করে নিয়েছে। এর মাঝে চোখ পড়ল আজিমপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অপরদিকে সকাল, সম্ভবত ৮.২০ মিনিটে নেত্রকোণার প্রত্যন্ত অঞ্চল খালিয়াজুড়ির একটি স্কুলে তখনো কোনো শিক্ষক আসেনি, স্কুল শুরু হবে সকাল ৯টায়। আমি, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ভাবতে অবাক লাগল যে প্রায় ১৮ মাস পর বহু প্রতীক্ষিত স্কুলগুলো খুলছে অথচ প্রথম দিনে এ অবস্থা, তাহলে বাকি দিনগুলো কীভাবে যাবে। বর্তমানে দেশে যেভাবে রাস্তাঘাটগুলো উন্নতি হয়েছে এখন মনে হয় কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল বলতে কিছু নেই। খোদ ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র আজিমপুরের স্কুলে এ অবস্থা! এ মহামারী থেকে আমরা কী কিছুই শিখিনি! কর্তব্য অবহেলার মাধ্যমে এমন একটি সেবামূলক পেশাকে কেন প্রশ্নবিদ্ধ করছি! সবচেয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে কিন্ডারগার্টেনগুলোর শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রী এসব প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যাবেন। এখন পাঠদান বন্ধ করে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান না করলে মনে হয় ভালো হয়। মন্ত্রী নিশ্চয়ই এ বিষয়ে একমত হবেন। অভিভাবকরা যদি ছুটির পরে বিদ্যালয়ের সামনে ভিড় না করে তাহলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো ভয় থাকবে না। গণমাধ্যমে দেখলাম স্কুল ছুটির পর বাচ্চারা স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি খাচ্ছে।
অভিভাবকদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। এ কথা সত্যিই যে এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে আশপাশে এক একটি বাজার গড়ে ওঠে, আবার এটিও সত্যি যে এসব বাজারের কারণে আবার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে। আমাদের অসচেতনতার জন্য আবার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, তাহলে ক্ষতি হবে আমার-আপনার সন্তানের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে আর বন্ধ না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকবেন অভিভাবক এবং তাদের সন্তানরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে।
অপর্ণা দত্তগুপ্ত : অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ও কলাম লেখক
[email protected]