সিএমবির শতবর্ষী গাছ কেটে হাসপাতাল নয়
তানভীর তানিম
🕐 ২:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২১
বৃক্ষ দেয় ছায়া, তার চেয়ে বেশি দরকারি অক্সিজেনের একমাত্র জোগানদাতাও। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে এভাবেই নিজেকে উৎসর্গ করে যাচ্ছে বৃক্ষ। কবি, সাহিত্যিকদের বর্ণনায়ও তার পরহিতকারী স্বভাবের বন্দনা বারবার বইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে। তারপরও প্রকৃতির অনবদ্য দান বৃক্ষের প্রতি আমাদের সহানুভূতি সেভাবে সৃষ্টি হয়নি। নানা অজুহাত ও তাল-বাহানায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গাছপালা কেটে উজাড় করা হচ্ছে এদেশে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর দিকে তাকালে এর পরিষ্কার চিত্র আমরা আমাদের আশপাশেই দেখতে পাই। নানা উন্নয়ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে এ সময় দেশজুড়ে গাছ কাটার এক মহাউৎসব পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় এটি আরও একবার পরিলক্ষিত হয়। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে গাছ কাটার ব্যাপারে দায়িত্বশীল মহলকে সরব হতে দেখা গেছে। রেস্টুরেন্ট তৈরির অজুহাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যেভাবে বৃক্ষশূন্য এক উদ্যানে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই একই ধারাবাহিকতায় সিআরবি এলাকার শতবর্ষী শিরীষ গাছগুলোকে কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে এবার তারা এক নতুন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। হাসপাতাল নির্মাণের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত এসব সবুজ বৃক্ষ কাটা হবে বলে জানান তারা। তাদের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ নগরবাসী যেমন বিস্মিত, তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। একইভাবে সংশ্লিষ্ট মহলের এ ধরনের কা-জ্ঞানহীন কর্মকা-ে বিশিষ্টজনরাও চিন্তিত ও শঙ্কিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের আয়তনের এক চতুর্ভাগ এলাকাজুড়ে অর্থাৎ শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশে এর পরিমাণ মাত্র ১২-১৫ শতাংশ। যার অধিকাংশই রয়েছে চট্টগ্রামজুড়ে। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উল্লেখযোগ্য অংশ এ অঞ্চলের বৃক্ষের ওপর নির্ভরশীল। যা নিধন হলে সারা দেশের মানুষ যেমন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। পাশাপাশি মরুকরণের যে প্রক্রিয়া বাংলাদেশে শুরু হয়েছে তা পূর্ণতা পাবে। সেই সঙ্গে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার কর্তৃক সারা দেশকে সবুজে রূপান্তরিত করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাও মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করছেন প্রকৃতিবিদরা। এরকম নানা প্রাসঙ্গিক কারণে সিআরবিতে শতবর্ষী গাছগুলোকে কেটে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে চট্টগ্রামবাসী। তাদের দাবি, সিআরবিতে নয় অন্য কোথাও হোক এ প্রকল্প।
তানভীর তানিম, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়