ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পড়ালেখায় করতে হবে মনোনিবেশ

গোপাল অধিকারী
🕐 ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২১

পড়ালেখায় করতে হবে মনোনিবেশ

করোনার থাবায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরিই ল-ভ- হয়েছে। করোনা মহামারীতে প্রায় ১৭ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সরাসরি পাঠদান। করোনাকালে শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি কয়েকদফা বৃদ্ধি করে তা এখনো বলবৎ আছে।

বন্ধ আছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা। থেমে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম। স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ কিছু পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু তাতে শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হচ্ছে না। ক্লাস বন্ধ থাকায় সরকার সংসদ টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তবে সব শিক্ষার্থী এ সুবিধা পাচ্ছেন না। শহুরে কিছু শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার কারণে মোটেও অনলাইন ক্লাস করতে পারেননি। মফস্বলের শিক্ষকরাও অনলাইন ক্লাস নেন না। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এই বন্ধের ফলে চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক।

করোনার প্রভাবে ব্যাপক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে, বেড়েছে বাল্যবিয়েও। শহুরে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে দেখা দিয়েছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যাও। করোনায় শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতির চিত্রও উঠে এসেছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন জরিপে। গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা এ সময় বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, টিভি দেখে সময় ব্যয় করছে। করোনার সময়ে বেশ কয়েকজন অভিভাবক একটি বিষয়ে তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তা হচ্ছে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও শিক্ষার্থীদের বাসায় অবস্থানের কারণে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ব্যবহার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সামগ্রী হাতের কাছে পেয়ে তার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমাদের ছাত্রসমাজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন বা মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে অল্প বয়সী বাচ্চাদের আজকাল ভারী চশমা ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইন্টারনেট আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীদের অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, হজমে সমস্যা, ঘাড় ও কোমর ব্যথা, মোটা হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই আসক্তি তাদের খিটখিটে মেজাজ, অল্পতেই ধৈর্যচ্যুতি, টেনশন বোধ, বিষণœতা, পারিবারিক সৌজন্যবোধের অভাবজনিত বিভিন্ন মানসিক সমস্যা তৈরি করছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহার করে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারজনিত আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে যা তাদের পড়ালেখা থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। এই আসক্তি থেকে বের হতে না পারলে শিক্ষার পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।

এমন সমস্যার কথা আমরা শুনছি বা জানি। তবে শতভাগ সত্য কথা এই যে, একজন দায়িত্বশীল পিতা-মাতা কখনো সন্তানকে বিপদে যেতে দেয় না। পিতা-মাতার দায়িত্বশীলতায় একটি সন্তান দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। তাই মহামারী করোনার এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে পিতা-মাতাকে আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার চাপ থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানের চাপে শিক্ষার্থীরা পড়ে কিন্তু যেহেতু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ সেহেতু শিক্ষার প্রয়োজনে অভিভাবকদের বাড়িকে বিদ্যালয়ে পরিণত করে সন্তানদের যত্ন নেওয়া উচিত। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করাও কঠিন হবে।

প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যক্রম বয়স ও মেধা আঙ্গিকে করা। তাই দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা যদি পড়ালেখা বা পরীক্ষায় না বসে তবে পরবর্তী বছরের পাঠ্যক্রমে সে তাল মেলাতে পারবে না। তাছাড়া ধাপে ধাপে যে শেখা তা থেকে বিচ্যুত হবে। ফলে নিজ নিজ সন্তানকে এই ধারাবাহিক ক্ষতি থেকে পোষাতে বাড়িতে বই শেষ করা বা ধারাবাহিকতা রক্ষার বিকল্প নেই।

সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলতে পারে তা কিন্তু সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে না। তাই এখনো যদি সন্তানকে পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনা যায় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আর সন্তানের শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে অবশ্যই অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি দরকার।

সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উভয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ শিক্ষা ছাড়া সঠিক পথ উপলব্ধি করা যায় না, আবার সুস্থতা ছাড়াও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব না। সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা একটি। আমার কাছে শিক্ষাকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকার বলে মনে হয় কারণ “শিক্ষাই জাতির মেরুদ-”। শিক্ষার কারণেই ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত বোধ বৃদ্ধি পায়। এই মহান কাজে পিতা-মাতার ভূমিকা কিন্তু কম নয়। আমরা যে শিক্ষিত জাতি চাই, আমরা যে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই সকল কিছুতেই শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই নিজ পরিবার, সমাজ তথা দেশ সকলের জন্যই শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। তাই আসুন আজ থেকেই বাড়িকে করি বিদ্যালয়, সন্তানের পড়ালেখায় করি আশ্রয়-প্রশ্রয়। বাবা-মার হোক আদেশ, পড়ালেখায় করো মনোনিবেশ।

নেপোলিয়নের প্রখ্যাত উক্তি তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব। দিগি¦জয়ী এ মহাবীরের এরকম আরও বহু কথা ইতিহাস বরাবরই আলাদা করে স্মরণ করে। স্মরণ করে তার বীরত্ব, প্রজ্ঞা ও বাহাদুরি। তবে তার মাকে নিয়ে কথাটার তাৎপর্য বর্তমান সময়েও অপরিসীম। একটি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর করোনাকালে এই কথা যেন শতভাগই কার্যকর।

গোপাল অধিকারী : সাংবাদিক

 
Electronic Paper