শিক্ষার্থীরা কতদিন ঘরে থাকবে!
রাশেদ ইসলাম
🕐 ৩:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১
করোনাভাইরাসে দেশে প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে, মানুষের জীবন ও জীবিকা করছে তছনছ আর তেমনিভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে করছে পঙ্গু। স্বাধীনতার পর দেশে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তার পেছনে রয়েছে শিক্ষা বিস্তারের কৃতিত্ব। অগ্রসর দেশগুলো জীবনের সব ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করেছে শিক্ষার জোরে। অথচ করোনাকালে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার অজুহাতে, প্রায় দেড় বছর ধরে টানা ছুটিতে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনটি শিক্ষাবর্ষের সূচি সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত।
রাস্তায় নিয়মিত যানবাহন চলাচল করছে। নদীতে লঞ্চ-স্টিমার সচল। বিপণিবিতানে দোকানিরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। ক্রেতারা নিয়মিত শপিংমলে যাচ্ছে। বিলাসবহুল শপিং মলের ফুড কোডগুলোতে ভোজনরসিক মানুষের প্রচ- ভিড়। পথে-ঘাটে মানুষ গিজগিজ করছে। হাটবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তোয়াক্কা নেই। কলকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক। দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক শুধু দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বহুমাত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকার কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ভুলে যাচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে দক্ষতা যাচাই না করে উপরের ক্লাসে উঠে যাচ্ছে। গ্রামে ও বস্তি এলাকায় কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে ও কিশোরীরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনলাইনে গেমসগুলোতে আসক্ত হয়ে, আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে তা মেনে নিয়েই মানুষকে জীবনযাপন করতে হবে। তাই অনির্দিষ্ট সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রেখে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কীভাবে সচল করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষার সংকট কাটাতে হলে, সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের টিকাদান নিশ্চিত করে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্রুত পরীক্ষা শেষ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছুটির দিনে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা, বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের নজরদারি করা, গরিব পরিবারগুলোকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে ড্রপআউট ও শিশু অপুষ্টি দূর করতে হবে। অটোপাসের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট সংকট নিরসন করে, বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি মওকুফ করতে হবে। এই ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমতালে চলতে হলে, শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা এখন সময়ের দাবি।
রাশেদ ইসলাম, শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ