স্টেরয়েডে স্বাস্থ্যবান গরুকে না বলুন
আবু মো. ফজলে রোহান
🕐 ৩:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১
দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। পশু কোরবানির এই ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। করোনার কঠিন সময়েও থেমে নেই ঈদ উৎসবের আগাম প্রস্তুতি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে বিরাজ করছে উৎসাহ উদ্দীপনা। কোরবানিকে ঘিরে প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪০-৫০ লাখ গরু জবাই হয়ে থাকে। দুঃখের বিষয় হলো, এ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী চরম মাত্রায় দুর্নীতির উপায় অবলম্বন করছে। যে উৎসবে কোরবানি করা হবে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে, সে উৎসবেও থেমে নেই কুচক্রী ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি।
পেশাদারি সৎ খামারিদের বিপরীতে অল্প সময়ে অসদুপায় অবলম্বন করে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণে মগ্ন একদল ব্যবসায়ী। অধিক মুনাফা লাভের স্বার্থে এসব বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করছে কোরবানির পশু। বিশেষ করে গরু মোটাতাজাকরণের অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব পশুতে ব্যবহৃত স্টেরয়েড গোশতে রয়ে যায়। ফলে গোশত খেলে ওষুধের প্রতিক্রিয়া মানব শরীরে মারাত্মকভাবে দেখা দেয়। ফলে কিডনি বিকল, ক্যান্সার, হার্ট ফেইলর, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। এছাড়াও কোমলমতি শিশুদের মস্তিষ্ক ও যৌনাঙ্গ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো লক্ষ রাখলে এসব অসুস্থ পশু ক্রয় করা থেকে সতর্ক থাকা যাবে। যেমন কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা গরুর শরীরে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে অনেক দেবে যায় এবং তা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে সময় লাগে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করে এবং একটু হাঁটলেই হাঁপায়। খুবই ক্লান্ত দেখায়। ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক তুলতুলে থাকে। যেসব গরুর মুখে বেশি লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কৃত্রিম উপায়ে মোটা করা পশু হতে পারে। সুস্থ গরু একটু চটপটে থাকে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু শরীরে পানি জমার কারণে নড়াচড়া কম করে। যেসব গরুর চেহারা স্বাভাবিক উসকোখুসকো এবং চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় বেরিয়ে থাকে, সেগুলো সুস্থ ও প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা গরুর লক্ষণ। বেশি চকচক করা গরু বা ছাগলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ বা কৃত্রিম উপায়ে স্বাস্থ্যবান করা হয়েছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে গরু ক্রয় করলে ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকা যাবে। আমরা সচেতন হলে এবং সতর্কতার সঙ্গে গরু ক্রয় করলে, অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারবে না। ফলে অসদুপায় অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। আমাদের একটু সচেতনতাই পারে সারা দেশের অসাধু ব্যবসায়ী বা খামারিদের দমিয়ে দিতে।
আবু মো. ফজলে রোহান, নবগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা