ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পারমাণবিক শঙ্কামুক্ত হোক বিশ্ব

সায়মা জাহান সরকার
🕐 ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১

পারমাণবিক শঙ্কামুক্ত হোক বিশ্ব

একবিংশ শতাব্দীর মানুষ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে বসবাস করতে চাওয়াটা স্বাভাবিক হলেও যুদ্ধ ও যুদ্ধের দামামা প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করে তুলছে। সাম্প্রতিককালের কাশ্মির ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব শুধু তাদের মধ্যে নয়, জানান দিয়েছিল বিশ্ববাসীকে এর ভয়াবহতা। আলোচনায় উঠে আসে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ও এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তাতে অনাহারে মারা যাবে আরও বহু কোটি মানুষ। এরকম এক বিপর্যয়ের ধারণা দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত এমন মারাত্মক বিশ্ব পরিস্থিতিতে, যুদ্ধহীন পৃথিবীর জন্য সাধারণ মানুষের আকুলতা কত যে কাম্য তা প্রকাশের অপেক্ষা রাখে না। তবুও যুদ্ধের আয়োজন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমগ্র মানবসভ্যতা সার্বিক অবলুপ্তির এক ভয়াবহ আশঙ্কার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই দায়িত্বহীনতা ও নির্বুদ্ধিতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যেই একবার স্পষ্টভাবে বলতে চাইব পারমাণবিক শঙ্কামুক্ত হবে কি আগামীর বিশ্ব? যদি না-ই হয়, তাহলে কী হবে আমাদের পরিণতি? পারমাণবিক যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে যে সব বিজ্ঞানী গবেষণা করেছেন আমেরিকা ও পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নে, তারা তাদের পরীক্ষালব্ধ ফল এবং কম্পিউটার মডেলকে ভিত্তি করে যথাসম্ভব নির্ভুল চিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, রাশিয়া ও আমেরিকার বিজ্ঞানীদের মতামত ও হিসাব এবং ক্ষেত্র ভিন্ন হলেও ভবিষ্যদ্বাণী প্রায় একই।

পৃথিবীতে যত পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে তার অর্ধেক যদি ব্যবহৃত হয় অথবা অর্ধেকেরও অর্ধেক, বা এরও অর্ধেক তা হলেও পরিণতি একই দাঁড়াবে। সমগ্র জীবজগতের ওপরে পারমাণবিক বোমার পরোক্ষ প্রভাব হবে প্রত্যক্ষ ধ্বংসলীলার তুলনায় অনেকগুণ বেশি। পারমাণবিক যুদ্ধ বাধার কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবী মেরু প্রদেশীয় হিমেল আবহাওয়ায় আবৃত হবে, যা অন্তত বছরখানেক টিকে থাকবে। সাত লক্ষ টন ধূলিকণা ও ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ে সূর্যকে ঢেকে দেবে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুম-লের তাপমাত্রা দাঁড়াবে ১০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডে। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় নেমে যাবে ৫০ ডিগ্রি নিচে। পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘পারমাণবিক শৈত্য’।

পারমাণবিক সংঘর্ষের এক বছর পর ধূলিকণা ও ধূম্রজালের আবরণ ভেদ করে সূর্যালোক যখন আবারও প্রবেশ করবে ভূ-পৃষ্ঠে, ততদিন পৃথিবীর সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে রূপান্তরিত হবে মরুভূমিতে। সূর্যের আলো তখন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আগের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি প্রতিফলিত হবে। সূর্যের আলো শোষণ করতে না পেরে পৃথিবী ক্রমাগত শীতলতর হওয়ার ফলে পুনরায় বরফ যুগ নেমে আসবে। হয়তো কেউ বলতে পারেন, উত্তর গোলার্ধে যদি নিউক্লীয় যুদ্ধ হয় তাহলে কিছু মানুষ হয়তো দক্ষিণ গোলার্ধে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হবে। কারণ, নিরক্ষীয় অঞ্চলে যে আবহাওয়াজনিত দেয়াল রয়েছে তা দক্ষিণ গোলার্ধকে হয়তো রক্ষা করবে। কিন্তু এ প্রত্যাশাও ভুল। দুই গোলার্ধের মধ্যে যে প্রচ- তাপমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টি হবে তা সমস্ত দেয়ালকে তছনছ করে দেবে। পৃথিবীর কোনো এলাকাই যে নিস্তার পাবে না পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থেকে। প্রমাণ দেখিয়েছেন সাবেক সোভিয়েত বিজ্ঞানী গলিতসিন ও গ্রিন্সবার্গ এবং আমেরিকান বিজ্ঞানী কার্ল সাগান। দেখা গেছে মঙ্গল গ্রহে গ্রীষ্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধূলিকণা গ্রহটিকে আবৃত করে ফেলে। সূর্যের আলো এর ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং প্রচ- তাপমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টি হয় উচ্চ বায়ুম-ল ও গ্রহপৃষ্ঠের মধ্যে। পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে তেমনি অবস্থার সৃষ্টি হবে পৃথিবীতে। ফলে, মানুষ থেকে শুরু করে কোনো প্রাণীই পৃথিবীতে সেই বিরূপ পরিবেশে টিকতে পারবে না।

যদি কোনো প্রাণী বিরল সম্ভাবনাময়, অসাধারণ দৈববলে এসব প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েও যায় তাহলেও তাকে অন্য বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের দ্বারা সৃষ্ট অগ্নিপি-কে ঘিরে যে বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন অক্সাইড সৃষ্টি হবে তা বায়ুম-লের ওজোনস্তরকে ভেঙে দেবে। বায়ুম-লের এই ওজোনস্তর প্রাণীজগৎকে সূর্য থেকে বিকীর্ণ অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। যে অতিবেগুনি রশ্মি একসময় জীবনের সূচনা করেছিল তারই আধিক্যে তখন জীবনের অবসান ঘটাবে পৃথিবীতে।

সায়মা জাহান সরকার : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper