ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পুলিশি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা জরুরি

মিজানুর রহমান
🕐 ৩:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

পুলিশি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা জরুরি

পুলিশ জনগণের সেবক, নিত্যদিনের পথচলায় নিরাপত্তা বিধানকারী সর্বোত্তম বন্ধু। পুলিশি ব্যবস্থার সূচনালগ্ন থেকেই দেশের প্রধান নিরাপত্তা রক্ষাকারী এ বাহিনী পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং অপরাধ দমন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পদচিহ্ন রেখে চলেছে। দেশের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে জনসাধারণের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যগণ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতেও সর্বদা প্রস্তুত থাকে। শুধু তাই নয়, দেশের জাতীয় সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানে এবং দেশের অচলাবস্থাকে পুনরায় সচল করে তুলতে পুলিশ সদস্যগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। কালের পরিক্রমায় এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় জনগণের প্রতি পুলিশ সদস্যদের এ সেবা ও ভালোবাসা এখন নতুন আঙ্গিকে নবীন রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে, আর্তমানবতার যথাযথ সেবা নিশ্চিতকল্পে এবং দেশের পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে গতিশীল ও আধুনিক হিসেবে রূপ দিতে সরকার ২০১৬ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝিতে চালু করে ‘বিডি পুলিশ হেল্পলাইন’ নামে একটি ডিজিটাল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপ্লিকেশনটি মোবাইলে ইনস্টলেশনের পর এর মাধ্যমে যেকোনো পুলিশি অভিযোগ দাখিল করা যায়। অভিযোগ দাখিলের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যায় পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স থেকে সংশ্লিষ্ট থানা পর্যন্ত। তাছাড়া জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে মোবাইল ফোনের কলের মাধ্যমেও অভিযোগ দাখিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের যেকোনো অভিযোগ দাখিলের টোল ফ্রি নম্বর হচ্ছে ৯৯৯ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে টোল ফ্রি নম্বর হচ্ছে ১০৯। অভিযোগ দাখিলের মাত্র মিনিট বিশেকের মধ্যেই পুলিশি তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৯টি যুদ্ধ কবলিত দেশে তাদের বীরত্ব ও অসামান্য সাহসিকতা প্রদর্শন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এখনো কাজ করে চলেছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ফোর্স বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি দল হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা যথাক্রমে আইভোরি কোস্ট, দারফুর, সুদান, পূর্ব তিমুর, কসোবো, লাইবেরিয়া, ডি আর কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, হাইতিসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে নিজেদের মিশন সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি এখন বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর ছয়টি দেশে চলমান সাতটি শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত আছেন বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচটি পুরুষ এবং দুইটি নারী সদস্যের সমন্বিত দল এফপিইউ-সহ সর্বমোট ২০৫০ জন পুলিশ সদস্য।

পুলিশ সদস্যদের এরূপ প্রখর মেধা, ধৈর্য ও বীরত্ব বিশ্ব দরবারে সুনাম বয়ে আনলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অভিযোগের যেন অন্ত নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ট্রাফিক বিভাগের কার্যক্রমে নিয়োজিত মুষ্টিমেয় এসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বছরের প্রতিটি দিনই নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি, অযথা হয়রানিসহ আরও নানাবিধ দুষ্ট বিশেষণ। যার ফলে এ সকল অসৎ পুলিশ সদস্যের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলাফল হিসেবে অতীতের সৎ, দায়িত্ববান ও পেশাদারিত্বে যথোপযুক্ত পরিচয় দেওয়া জনগণের গর্ব ও অহংকারের পুলিশ বাহিনী যেন এখন হিংসা ও পরিতাপের বস্তু। যার পিছনে দায়ী এসব অসৎ পুলিশ সদস্যের বিকৃত মস্তিষ্কের নিকৃষ্ট কর্মকা-। পুলিশ সদস্যদের এ হীন মনোভাব যেন ছোঁয়াচে ব্যাধির মতো ক্রমান্বয়ে অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে। কথায় আছে না, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!’ চোখের সামনে প্রতীয়মান এ যেন তারই বাস্তব চিত্র। সহকর্মী পুলিশ বন্ধুর পরিবারের সচ্ছলতা অবলোকন করে নিজের পরিবারে সচ্ছলতা না আসার কারণ খোঁজা শেষে শেষমেশ নিজেকেও হারিয়ে ফেলে এই পাপের সমুদ্রের গহিন কোনো খাদে। ফলাফল হিসেবে এসব প্রতারণাপূর্ণ কাজের স্বীকার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানবিকতাশূন্য এসব পুলিশ সদস্যের গর্হিত কার্যক্রম যে কতটা বর্বরোচিত তা একজন হতদরিদ্র বাবার কাছ থেকেই জেনে নেওয়া উত্তম।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এখন বিশ্বদরবারে শান্তি ও সমৃদ্ধির মূর্ত প্রতীক। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এ শান্তিপূর্ণ কাজ ও সফলতায় বিঘœ ঘটাচ্ছে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু অসৎ পুলিশ সদস্য। তাই দেশীয় পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমের সফলতা ও সুনাম বিশ্বব্যাপী ধরে রাখতে দেশের পুলিশি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনয়নের বিকল্প নেই। আর সে কারণেই এসব বিকৃত মস্তিষ্কের পুলিশ সদস্যদের অসাধু কার্যকলাপের প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি দেশের শিক্ষিত ও সচেতন মহলকে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াও জরুরি। কোথাও পুলিশি হয়রানির চিহ্ন দেখা গেলেই সচেতন মহলকে একতাবদ্ধ হয়ে সেখানেই রুখে দিতে হবে। সমাজের কেউ যাতে পুলিশি হয়রানির স্বীকার না হয় সেজন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আসুন সমাজ, দেশ ও জাতির ভালোর স্বার্থে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করি পাশাপাশি অন্যদেরও সঠিক পথে চলতে উৎসাহিত করি।

মিজানুর রহমান : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper