ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিজ দায়িত্বে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

কামরুজ্জামান তোতা
🕐 ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২১

নিজ দায়িত্বে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

রমজানের ঈদুল ফিতর সন্নিকটে, রাজধানীসহ সারা দেশের দোকানপাট শপিংমলসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। ভিড় বাড়ছে শপিং মলগুলোতে। একই কারণে সড়কে যানবাহনের চাপও বেড়েছে। এতে সড়কে বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের চাপ অনেক বেড়েছে। নগর, বন্দর, শহর, মহাসড়ক, রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে দেখা দিচ্ছে যানজট। ঈদকে সামনে রেখেই সেখানে ক্রেতাদের সমাগম বেশি হচ্ছে। এত লোক সমাগমের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চেক পোস্টগুলোতে পুলিশের তেমন কোনো নজরদারি নেই। শপিং মলগুলোর কিছু দোকানে মানা হচ্ছিল স্বাস্থ্যবিধি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেককেই মাস্ক না পরতে কিংবা থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে। কেবল কিছু মার্কেটের প্রবেশপথে হাত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে দোকানগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো সচেতনতা দেখা যায়নি। দোকান মালিকরা জানান, আগের তুলনায় ভিড় অনেকটাই বেড়েছে। সামনে গণপরিবহন খুলে দেওয়া হলে এই ভিড় আরও বাড়বে। কারণ, এখন শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশা বা অটোরিকশায় করে ক্রেতারা শপিংমল ও দোকানে আসছেন।

ফেরিঘাটগুলোতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় আরও বেড়েছে। এতে যথারীতি উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সামাল দিতে আমরা দেখছি ১৪ এপ্রিল থেকে প্রায় পুরো এপ্রিল মাসই সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যাকে বলা হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। এতে জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যক্রমের বাইরে সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে এবং ইতোমধ্যে শপিংমল খুলে দিয়েছে সরকার। লকডাউনের কারণে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন নতুন করে।

লকডাউনের কালে মানুষকে ঘরবন্দি করে প্রকৃতি তার আপনরূপের প্রকাশ ঘটিয়ে প্রমাণ করেছিল মানুষ বৈশি^ক সবুজকে বিনষ্ট করে কতটা অবিচার করছে। এ বিশ্বের সবকিছু তার আপনগতিতে চলে তা যেন মানুষ মানতে নারাজ। আর সেক্ষেত্রে প্রকৃতির কাছে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি যে সহনীয় নয় তার প্রমাণ হলো লকডাউনের সময়।

ঘরবন্দি মানুষ বিবেকের তাড়নায় তখন উপলদ্ধি করেছিল হিংসা, বিদ্বেষ ,অনিয়ম, দুর্নীতি, অসত্যের পথে চলতে গিয়ে এ সমাজকে তারা নিজেরাই নষ্ট করে দিয়েছ। ক্ষমতার দাম্ভিকতা কিংবা অর্থের প্রতিপত্তি কতটা তুচ্ছ প্রকৃতির বিধানের কাছে তা বুঝিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য ভাইরাস। তখন অসহায় মানুষ কেবল বাঁচার আশায় নিজেকে সংশোধনের বাণী শোনালেও তা ভুলে গিয়েছিল করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের ঢেউ শুরু হলে শ্রমিকরা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার নতুন হুমকির মুখে পড়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় যৌথ উদ্যোগ জরুরি। এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে অন্যান্য দেশের কৌশলগুলোর ওপরও নজর দেওয়া দরকার। কোন দেশ কী ধরনের সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে কতটুকু সফল হয়েছে, সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমাদের সহায়তা কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তাছাড়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জালকের কৌশলের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। একই সঙ্গে, কারখানাগুলোকে টেকসই করে তোলার উদ্যোগও নিতে হবে। কারণ, কারখানা টিকে থাকলে শ্রমিকদেরও টিকে থাকার পথ পরিষ্কার হবে।

ডা. বেনজির আহমেদ একটি বক্তব্যে বলেন প্রত্যেক রোগীকেই যেন আইসোলেশনে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু আমাদের রোগী কমে গিয়েছে সুতরাং এটা অসম্ভব না। আমাদের ঢাকা শহরে যদি জনস্বাস্থ্যের এ রকম পাঁচশ’ টিম থাকে, যারা এই আইসোলেশন নিশ্চিত করবে। প্রতিটা টিমে একজন ডাক্তার নেতৃত্ব দেবেন। সেখানে নার্স থাকবে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকবে, স্বেচ্ছাসেবক থাকবে, পুলিশ থাকবে, স্থানীয় প্রতিনিধিরা থাকবেন। সবাই মিলে যে এলাকাগুলোতে রোগী আছে সেই রোগীগুলোকে যদি আইসোলেট করার ব্যবস্থা করবেন। যেমন ধরুন, যখনি আমাদের অধিদফতর থেকে একটা রোগীকে পজিটিভ পাওয়া যাবে তখন তাদের তালিকাটা ওই স্ব স্ব এলাকার টিমকে দেবে।

তখন তারা তালিকা ধরে সেই রোগীর বাড়িতে যাবে। একদিকে রোগীকে চিকিৎসায় সাপোর্ট দেবে, দেখবে কী অবস্থায় আছে, তার হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি না। থাকলে হাসপাতালে পাঠাবে। আর যদি হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন না থাকে, তাহলে বাড়িতে কীভাবে আইসোলেশন করবে, সেটা দেখাবে। যাতে করে পরিবারের আর কোনো সদস্য আক্রান্ত না হয়। এবং তাকে বোঝাবে, দেখাশোনা করবে। পরিবারের সদস্য যারা সংস্পর্শে আসছে তাদের নজরদারিতে রাখবে। তাদের টেস্ট করবে। এবং তাদের মধ্যে কেউ আবার শনাক্ত হলে তাকে দ্রুত আইসোলেট করবে। এটা যদি করা যায় তাহলে আমরা রোগের উৎসে ব্যবস্থা নিতে পারব। তখন অন্য জায়গাগুলোতে কাজ তেমন না হলেও যেহেতু আমরা উৎসতেই নিয়ন্ত্রণ করলাম, তাহলে হয়তো কিছুটা রাশ টেনে ধরা যাবে। এটাই করা উচিত এখন। কারণ, লকডাউন আর সহসা দেওয়া যাবে না।

পাশাপাশি ভারত থেকে অধিক সংক্রমণ যাতে করে না আসে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে যাতে না আসে, সেই জন্য ১৪ দিনের জন্য কোয়ারান্টিন মেইনটেইন করতে হবে। পাশাপাশি এই সময়ে হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে সরকারের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। আমাদের হাসপাতালগুলোর যেখানে যা ঘাটতি আছে লোকবল, ডাক্তার, নার্স, ক্লিনার সেগুলো ঠিক করা, তাদের ট্রেনিং দেওয়া, যেখানে ওষুধপত্রের ঘাটতি আছে সেখানে সেগুলো পূরণ করা, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। সামনে যে রোগী বাড়বে তাদের জন্য ঠিকমতো ব্যবস্থা করা। এটিই বর্তমানে সরকারের কৌশল হওয়া উচিত।

এটাই মানুষের স্বভাব। বিপদে পড়লে পাপের ক্ষমা চায়। আর অনুকূল পরিবেশ পেলেই ভুলে যায় সব। নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা রিপুগুলো সাপের মতো ফণা তুলে ছোবল দিতে শুরু করে তার হিংসা, বিদ্বেষ আর অন্যায়, অবিচার অনিয়ম, দুর্নীতি দিয়ে। তাই আজ এ কথা সত্যি যে এ পৃথিবীতে মানুষের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে পারবে না কোনোকিছু। সবার সুখে-দুঃখে আমরা সবাই একে অপরের পাশে থাকি সবসময়। বাংলাদেশের মানুষ আসলে কতটা সচেতন করোনার বিষয়ে এটা নিয়ে ভাবার আছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সচেতন করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিক্ষার দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে কী অবস্থা হবে সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া জরুরি নয়। মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের আছে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

কামরুজ্জামান তোতা : সাংবাদিক, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ

 
Electronic Paper