করোনা নাকি মশা!
এনাম রাজু
🕐 ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১
মশা নিয়ে মশকরা কম হয়নি আর তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের নানান কর্মসূচিও কম জল ঘোলা করেনি। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। সে সব কথা এখন অতীত। কিন্তু নতুন খবর হলো- কর্তৃপক্ষের মশক নিধন কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব অতিমাত্রায় বেড়েছে। এতটাই বেড়েছে যে দিন-রাত মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সূর্যের আলোয় যে মশার উৎপাত শুরু হয় সে মশা রাত জেগে গান শোনাতে ব্যস্ত। এই গান শুধু ঘুম ভাঙানির গান নয়, আতঙ্কের গান। যে গান হার মানায় স্বাধীন দেশে মানুষকে মশারির দেয়াল ভেদ করে অসুস্থ করার। এই গান গেয়ে গেয়ে মশা জানিয়ে দেয় আঙুলের ডগায় মানুষকে জিম্মি করার ভয়াবহতার ইতিহাস। আর বলে কর্তৃপক্ষের সামান্য অবহেলা, অসচেতনতা বা দুর্নীতির ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। আমরা সর্বদাই এমন অবহেলা, অসচেতনতা ও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের কারণে সমস্ত দেশের মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। সে কথা এখন আর কারও অজানা বা বিস্ময়ের খোরাক হয় না।
‘এখন অভিজাত এলাকার বাসিন্দারাও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ’- এমন বাক্য প্রায়ই টেলিভিশনের পর্দায় শোভা পায় কিংবা পত্রিকায় বড় অংশ দখল করে নিচ্ছে। এই যে অভিজাত এলাকায় মশার বিচরণ এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনাদের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আপনারা বা আমরা কখনো কি অভিজাত মানুষের বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে পারি না! প্রতিদিনই যেখানে মশার ছোবলে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ সে খবর রাখাটা এখন সময়ের দাবি।
বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। এ বিষয়ে প্রতি বছরের এ সময় প্রায় একই চিত্র লক্ষ করা যায়। এ মশার প্রজননস্থলগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এসব মশার উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব। কিউলেক্স মশার প্রজননস্থল খাল ও নর্দমা। সমস্ত ঢাকাই এখন নর্দমার অংশবিশেষ। তবে সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে পরিত্যক্ত খাল ও নর্দমা পরিষ্কার করতে কর্তৃপক্ষের নানান উন্নয়নমুখী উদ্যোগ। এটাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একই সঙ্গে এসব খালে মশা সৃষ্টির পথ ধ্বংস করতে হবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অনেক। ইতোমধ্যে কোনো কোনো সিটি করপোরেশনের পরিধিও বেড়েছে। এতে বেড়েছে দায়িত্বের পরিধিও। কোনো এলাকায় মানুষ মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের ভালো কাজের দৃষ্টান্তগুলো তাদের কাছে মøান হয়ে যায়। রাজধানীজুড়ে এডিস মশার ব্যাপক বিস্তারের কারণে দেশবাসী আতঙ্কিত হয়েছিল, এটি বেশিদিন আগের কথা নয়। খুব বেশি দিন হয়নি যখন একটি মশা কয়েকটি প্রাণের ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সেসব কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই মশা নিয়ে আর নীরবতা নয়। এবার মশা ঘুম ভাঙানোর আগেই কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙতে হবে। নেমে পড়তে হবে মাঠে মশা নিধনে। কোনো মঞ্চে না টিভি সেটের সামনে বসে যে সব মনগড়া কথা বলা যায়, সে সব কথা আজ মশাও জেনে গেছে। তাই মশাও মানুষকে নিয়ে তামাশার খেলায় মেতেছে।
একদিকে মশা অন্যদিকে করোনা মহামারী। চলছে দেশজুড়ে লকডাউন। নভেল করোনাভাইরাস শুরুটা চীনের উহানে হলেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে সত্তর বছরের এক ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার পর বিশ্ববাসী এই নতুন ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারে। যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। ৮ মার্চ ২০১৯ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর এখানেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এখন বিশ্ববাসীর একটাই চাওয়া- কবে করোনার ভয়াল থাবা থেমে যাবে। কবে আবার পুরনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে।
করোনাকালীন এই সংকটময় মুহূর্তে মানুষের জীবনের করুণ আর্তনাদ আগে কখনো কেউ দেখেনি, ইতিহাস সে কথাই বলে। সংকটকালে একেকজন একেক রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এখনো হচ্ছে। এই সংকটকালীন মানুষের যাপিত জীবনের এসেছে নানান সংকট। এই সংকট থেকে সহজেই যে মুক্তি নেই। সেটা ইতোমধ্যে মানুষ জেনে গেছে। বাংলাদেশ আবার চৌদ্দদিনের লকডাউনে যাচ্ছে। এই লকডাউনের সময়ই হতে পারে না, মশার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের সফল অভিযান। কারণ জনশূন্য পরিবেশে কাজের একটা সহজ ও সুন্দর পরিবেশ পাওয়া যাবে। তাছাড়া লকডাউনের কারণে মানুষ থাকবে ঘরবন্দি। অথচ মশার কারণে যদি জনজীবনে অশান্তি ও নতুন করে ডেঙ্গুর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তাহলে তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও কঠিনের পথে নিয়ে যাবে। এমনিতেই করোনা নিয়ে সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর পরিস্থিতি চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিত্র।
মশার বৃদ্ধিতে নগরবাসীরও দায়িত্বহীনতার কথা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি। আমরা যেকোনো সমস্যায় প্রথম কর্তৃপক্ষকে দায় দিয়ে নিজেদের দায়িত্বহীনতা এড়িয়ে যাই। কিন্তু না, নগরবাসীর দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রে। আমরা যদি আমাদের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারতাম। তাহলে মশার বংশ বিস্তার রোধ হবে। তাতে নিজেরা যেমন নিরাপদ থাকব তেমনি অন্যদেরও নিরাপদ রাখতে সহযোগী হতে পারি। তবেই করোনার এই দুঃসময়ে নতুন করে ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ রোগ থেকেও কিছু স্বস্তিতে ঘরে থাকা যেতে পারে।
করোনা বনাম মশা। কোনোটাকেই উপেক্ষা করার উপায় নেই। তবে করোনা থেকে উত্তরণের রথে মানুষ উঠতে পারেনি। কিন্তু সচেতন হলে কিছুটা এড়িয়ে চলা যায়। যদিও ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন এসেছে। সেই ভ্যাকসিনে আশার আলো ছড়িয়েছে। করোনা ও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হলো করোনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে মহামারী হিসেবে। আর মশা নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে আমাদের ভাবতে হবে। যেহেতু কর্তৃপক্ষের সামান্য সদিচ্ছার কারণেই মশার মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রেও জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়া দরকার। নইলে বিপদ দূরে নয়। এমনিতেই করোনার মহামারী এখন বাংলাদেশকে ছন্নছাড়া করার জন্যই যথেষ্ট।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে নতুন করে সারা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই লকডাউনের সময়ে সরকার চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মশা নিধনের কাজের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাতে ফলাফল ভালো হবে মনে করি। শুধু মশা নিধনের জন্যই নয় অন্য কিছু কাজও এই সময়ে এগিয়ে নিতে পারে।
এনাম রাজু : কবি ও গল্পকার