শ্রমিক-মালিক : কে কার স্বার্থ বোঝে
মশিউর রহমান ক্যাপটেন
🕐 ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১
লকডাউন পালিত হচ্ছে। কোথাও ঢিলেঢালা নয়। তবে গত বছরের তুলনায় অনেকখানি শিথিল। কারণ, গত বছর লোকজনকে মুখে মাস্ক পরিয়ে ঘরবন্দি করা গেছে। এবার তার একেবারে উল্টো ব্যতিক্রম। তা হলো, গেল ০৫.০৪.২০২১ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন শেষ হতে না হতে আরও কড়াভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়েছে। যেভাবে পালনের নির্দেশ কিন্তু সেভাবে বাস্তবতা নয়। যানবাহন দোকানপাট বন্ধ রাখা গেলে লোকজনকে ঘরবন্দি করা যায়নি কোনোভাবে। তাছাড়া অনেকে দিব্যি ঘুরছে মাস্ক না পরে। অবস্থা দেখলে মনে হয় বাস্তবতায় কোনো লকডাউন চলছে না সবই যেন পূর্বের মতোই স্বাভাবিক।
আমি কোনো প্রফেশনাল কলাম লেখক নই। তবুও কেন জানি বাস্তবতার উপরে লেখার জন্য নিজের ভিতরে তাড়িত হই। সেহেতু লেখা শুরু। স্বার্থপর দুনিয়ায় কে কার স্বার্থ বোঝে? সবাই শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখে। এটাই বাস্তব ও চিরসত্য। আমার লেখা হলো, এবারের পহেলা বৈশাখও সকলের নিরানন্দে কেটেছে। এবারের বৈশাখে কোথাও কোনো আনন্দ উদযাপন হয়নি। তার ওপর পবিত্র রমজানের আগমন ও লকডাউনের নির্দেশ পালন। দুইয়ে মিলে মানুষজন একেবারে বোকা বনে গেছে। এ অবস্থায় ভোগান্তি বেড়েছে খেটে খাওয়া কুলি শ্রমিক ও দিনমজুরের।
বর্তমান লকডাউন সামনে রেখে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে। আবার হাতেগোনা কিছু কারখানা চালু রেখেছে। যা চালু আছে তাতে আবার শ্রমিক ছাঁটাই করে দূরের শ্রমিকদের বোনাস না দিয়ে শুধু বেতন দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। যেসব কারখানা ছুটি দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে তাই নিয়ে আমার লেখা। আমার কথা হলো, মালিকপক্ষ কখনো কোনোদিন শ্রমিকের ব্যথা-বেদনা বোঝার চেষ্টা করেনি। কোনোদিন করবেও না। কখনো বুঝবেও না।
এমন অনেক শ্রমিক আছে এরা একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না। এদের অবস্থা এতদিনে কী দাঁড়াতে পারে এটা কি কখনো ভাববে মালিকপক্ষ কিংবা সরকার? কে এদের দেখভাল করবে? মালিকানা স্বায়ত্তশাসিত কারখানাগুলোর বেশির ভাগ শ্রমিক মূর্খ ও অর্ধমূর্খ। মালিক যা বোঝায় তাতে সায় দিয়ে নীরবতা পালন করে।
বিপরীতে গেলে হয় পিঠের চামড়া ওঠে নয়ত কারখানা থেকে ছাঁটাই করে পেটে লাথি মেরে বাদ দেওয়া হয়। এদের বুদ্ধিসুদ্ধিও কম। আবার হিসাবের চেয়ে বেতনও কম। কখনো কোনো শ্রমিক তার পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্য মূল্য পায় না। শ্রমের তুলনায় বেতন অর্ধেক। শ্রমিক বছরের পর বছর পরিশ্রম করে শ্রমিক থেকে যায়। ওদিকে মালিকপক্ষ বছর না ঘুরতে গাড়ি-বাড়ি আরও কত কিছুর উন্নতি হয়। এ বৈষম্য আমাদের আদিকালের। আজ অব্ধি কোনো পরিবর্তন হয়নি, আর হবেও না।
শ্রমিক দিবস এলে শ্রমিকদের নিয়ে মঞ্চে মিটিংয়ে টেলিভিশনে নানা টকশোতে নানা আলোচনা করতে দেখা যায়। শ্রমিকের ভাগ্যের উন্নতি হয় না। মূলত, মালিকপক্ষ শ্রমিককে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। শ্রমিকদের চাপ দিয়ে শুধু কাজ করাতে জানে। এটাই ওদের ছলচাতুরি।
এবার যেসব কারখানা ছুটি হয়েছে এসবের শ্রমিক মনে হয় আগুনের ভিতর দিয়ে হেঁটে মহাবিপদ পেরিয়ে বাড়িতে গেছে। গ্রামে যেতে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। ভাড়াও দ্বিগুণ যানবাহনেও ভোগান্তি। যা অর্জন করেছে তার অর্ধেক রাস্তায় শেষ। বাড়ি গিয়ে করবে কী, এ এক মহাভোগান্তি। এরা বাড়িতে গিয়ে কী করবে কী খাবে তা কে ভাবে দুনিয়ার জীবনে বলেন তো। এদের কথা কখনো কোনো মালিকপক্ষ ভেবে দেখেছেন কি? সরকারি আদেশ হয়েছে তাই মানতে দায়সারাভাবে শ্রমিকদের ঠকিয়ে কারখানা থেকে বিতাড়িত করে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
এই ভুক্তভোগী শ্রমিকদের সামনে কী হবে তা কি কোনো মালিকপক্ষ কখনো ভেবে দেখবেন? আমাদের অবস্থা এমনি, প্রয়োজন শেষ তো সব শেষ। সিগারেটের শেষাংশের মতো নিক্ষেপ করে নর্দমার আস্তাকুঁড়ে। বিশেষ করে মালিকানা কারখানার শ্রমিকদের অবস্থা ভয়াবহ বেহাল দশা। কারণ, তাদের ছুটি আছে বেতন নেই। নেই বোনাস না আছে বৈশাখী ভাতা। সরকারি কর্মীর কথা বললে সব সুবিধা যেন ওদেরই। একের ভিতর সব। অথচ, চিন্তা করে দেখেন এত বড় কারখানার শ্রমিকই প্রাণ। কারখানার সব আছে কিন্তু শ্রমিক নেই, চলবে না। কখনো এটা মালিকপক্ষ ভাবে না। কী নিকৃষ্ট ও নির্মম ব্যবহার। চিন্তা করা যায়। এত সব সমস্যার কবে হবে সমাধান? এসব শ্রমিকের আহাজারি ও নিঃশ্বাসে যখন আকাশ বাতাস ভূম-ল প্রকম্পিত হয়ে কেঁপে কেঁপে ভারি হয়ে ওঠে তখন পতন হয়ে কোটিপতি মালিকও ভিখারি হতে সময় লাগে না। তাই বলব, মালিকপক্ষ শ্রমিকের প্রতি নির্দয় না হয়ে সদয় হোন। মালিক পক্ষের সুমতি আর সুবুদ্ধির উদয় হোক।
মশিউর রহমান ক্যাপটেন : খোলা কাগজের পাঠক