ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিন

শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান
🕐 ১২:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২১

সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিন

অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে সূচিত শিল্পবিপ্লব মানবসমাজের সার্বিক দিক দিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে সমাজে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়। শিল্প বিপ্লব মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তিতে পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশ ঘটে। আধুনিক শিল্প সমাজের ক্রমবর্ধমান বিকাশের জটিলতার ফল হচ্ছে সমাজকর্ম।

সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে বিবেচিত। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও এই বিষয়ের রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা। সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা হলেও বিষয়ভিত্তিক হিসেবে এটি যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত এবং বৈচিত্র্যময়।

বাংলাদেশে সমাজকর্মের আবির্ভাব ঘটে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে হলেও বৈশি^কভাবে ১৮৯৮ সালে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পঠিত হয় সমাজকর্ম বা আধুনিক সমাজকল্যাণ।

১৯৫৪ সালে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন সরকারের উদ্যোগে ৯ মাসমেয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয় এবং সে সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স কোর্স চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর ঢাকায় দেশের প্রথম সমাজকর্মের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘কলেজ অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সালে রূপান্তরিত করা হয় ‘সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে। বর্তমানে দেশের প্রথম সারির অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সমাজকর্ম পড়ানো হয়।

বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রচলন ও প্রসার এর অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও এটি এখনো প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সরকারের সমাজসেবা অধিদফতরের সমাজসেবা অফিসারের পদটি সমাজকর্ম স্নাতকদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সরকার তা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। মূলত বাংলাদেশে সমাজকর্মের পেশাদার স্বীকৃতি লাভের প্রক্রিয়াটি তখনই রুদ্ধ হয়ে যায়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ডসহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে সমাজকর্ম ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকের মতো পেশা হিসেবে স্বীকৃত। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও সমাজকর্মের রয়েছে বিশেষ কদর।

বিশ্বায়নের যুগে একটি সমাজে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। নারী সমস্যা, আত্মহত্যা, শিশুকিশোর অপরাধ, মানবাধিকারজনিত সমস্যা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, সামাজিকীকরণ ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ইত্যাদি। সামাজিক এই সমস্যা সমাধান ও কার্যকরে পেশাদার সমাজকর্মীর বিকল্প নেই। একজন পেশাদার সমাজকর্মী তার বৈজ্ঞানিক গবেষণানির্ভর চিন্তা ও সামাজিক প্রায়োগিক দক্ষতার সম্মিলনে একটি সমাজ বা সম্প্রদায়ে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। কিন্ত আমাদের দেশে পেশাদার সমাজকর্মীদের স্বীকৃতি ও নিয়োগের সংস্কৃতি এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। পেশাদার সমাজকর্মীর স্বীকৃতিহীনতার কারণে আমাদের দেশে পরিপূর্ণ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথ বিকশিত হচ্ছে না। ফলে আর্থ-সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। একজন যোগ্য পেশাদার সমাজকর্মীর সামাজিক গবেষণামূলক তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও সমাজে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সৃজনশীল উদ্ভাবনী উন্নয়নমূলক চিন্তাকলাপের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

এমতাবস্থায় ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগ ও স্বীকৃতি প্রদান করা লক্ষ সমাজকর্ম স্নাতকদের সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান : শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper